রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং এর উপাদান (History-11 Short Q&A)

অর্থশাস্ত্র কী?

কৌটিল্যের লেখা গ্রন্থটির নাম হল 'অর্থশাস্ত্র'। অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু হল রাষ্ট্রনীতি।


অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু কী ছিল?

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনব্যবস্থা, রাজস্বব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, ভারতীয় সমাজজীবন, নারীদের অবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের আলােচনা রয়েছে। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে রাজার প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, যথা—রাজ্যশাসন, পালন, প্রজাস্বার্থরক্ষা, দণ্ডবিধি, কূটনীতি গ্রহণ, গুপ্তচর নিয়ােগ, যুদ্ধ পরিচালনা পদ্ধতি প্রভৃতি। দেওয়ানি, ফৌজদারি ছাড়াও ব্যক্তিগত আইনাবলি অর্থশাস্ত্রে বিশদভাবে বর্ণিত রয়েছে।


অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি কবে আবিষ্কৃত ও প্রকাশিত হয়?

অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি মহীশূরের পণ্ডিত ড. শ্যামশাস্ত্রী ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কার করেন। ড. শ্যামশাস্ত্রী কর্তৃক আবিষ্কৃত অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।


অর্থশাস্ত্রে রাজার কর্তব্য সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, রাজা স্বেচ্ছাচারী না হয়ে প্রজাদরদি হবেন। কৌটিল্যের মতে প্রজাদের মঙ্গল, সমৃদ্ধি ও সুখ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজাকে সক্রিয় থাকতে হবে।


'সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব' কী?

কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করে এর সাতটি অঙ্গের কথা বলেছেন। এগুলি হল—স্বামী অমাত্য, পুর, জনপদ, কোশ, দণ্ড ও মিত্র। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কিত এই তত্ত্ব 'সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব' নামে পরিচিত।


আমরা কীভাবে জানতে পারি যে, চাণক্যের ছদ্মনাম ছিল কৌটিল্য ?

গুপ্তযুগে বিশাখদত্ত রচিত মুদ্রারাক্ষস নাটক থেকে আমরা জানতে পারি যে, চাণক্যের ছদ্মনাম ছিল কৌটিল্য। বৌদ্ধ ও জৈন শাস্ত্র গ্রন্থগুলিতেও এর সমর্থন মেলে।


কৌটিল্য বর্ণিত স্বামী বা রাজার সঙ্গে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর কার আদর্শের মিল রয়েছে?

কৌটিল্য বর্ণিত রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গ বা উপাদানের প্রথমটি হল স্বামী অর্থাৎ রাজা। কৌটিল্যের স্বামী উপাদানটির সঙ্গে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বর্ণিত রাষ্ট্রদর্শ দার্শনিক রাজা (Philosopher King) a wreel comfort (Guardian Class)-এর মিল রয়েছে।


ইতিহাস চেতনা (History-11 Short Q&A)


রাজনীতির বিবর্তন—শাসনতান্ত্রিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা (History-11 Short Q&A)


অর্থনীতির বিভিন্ন দিক (History-11 Short Q&A)


সামাজিক ঘটনাস্রোত (History-11 Short Q&A)


দিগন্তের প্রসার (History-11 Short Q&A)


কৌটিল্য তার সপ্তাঙ্গ তত্ত্বে রাজকর্তব্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে কী কী গুণাবলির প্রয়ােজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন?

কৌটিল্য তাঁর সপ্তাঙ্গ তত্ত্বে রাজকর্তব্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে চারটি গুণাবলির প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল- [1] অভিগামিক গুপ, [2] প্রজ্ঞাগুপ, [3] উত্থান গুণ ও [4] আত্মসম্পদ।


জনপদের আয়তন ও জনসংখ্যা প্রসঙ্গে কৌটিল্যের পরামর্শ কী ছিল?

কৌটিল্য বলেছেন—প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে একশত এবং অনুধ পাঁচশত পরিবার বসবাস করবে। স্মরণীয় আটশত গ্রাম নিয়ে জনপদের বৃহত্তম একক গঠিত হবে।


কৌটিল্য কী কী দুর্গের উল্লেখ করেছেন?

কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে চার ধরনের দুর্গের উল্লেখ করেছেন। এই চার দুর্গের নাম হল—গিরিদুর্গ, মরুদুর্গ, জলদুর্গ, বনদুর্গ।


কৌটিল্যের মতে, কোশ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

রাষ্ট্রব্যবস্থার যাবতীয় কাজ পরিচালনায় কোশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রাজকোশে সােনা, রুপা, মণি ও অন্যান্য রত্ন সতি থাকলে দুর্ভিক্ষসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মােকাবিলা করা যায়। কোশে অর্থ না থাকলে স্থায়ী সেনাবাহিনী রাখা যায় না, ফলে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়।


কৌটিল্যের মতে কূটনীতির চারটি উপাদান কী কী?

কৌটিল্যের কূটনীতির চারটি উপাদান হল- [1] সাম (সন্তুষ্টি বিধান), [2] দান (অর্থ বা বস্তুর বিনিময় বা দুর্বল রাজাকে অভয় দান), [3] দণ্ড (সামরিক শক্তির প্রয়ােগ) ও [4] ভেদ (বিভেদ নীতির প্রয়ােগের দ্বারা শত্রু শিবিরে ভাঙন)।


কৌটিল্য বর্ণিত ষড়গুণ বলতে কোন্ ছয়রটি গুণকে বােঝায়?

কৌটিল্য বর্ণিত ষড়ুগুণ অর্থাৎ ছয়টি গুণ হল- [1] সন্ধি (শান্তি স্থাপন) [2] বিগ্রহ (যুদ্ধ), [3] আসন (নিরপেক্ষতা), [4) যান (যুদ্ধ যাত্রা), (5) সাশ্রয় (অপরের আশ্রয় গ্রহণ বা অপরের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন), [6] দ্বৈধীভাব (একের সঙ্গে সন্ধি অন্যের প্রতি যুদ্ধ)।


পারসিক প্রদেশগুলির শাসনব্যবস্থার কী নাম ছিল?

পারসিক প্রদেশগুলির শাসনব্যবস্থা স্যাট্রাপি নামে পরিচিত ছিল।


কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রের সপ্তম অঙ্গ মিত্র কয় প্রকার ও কী কী?

কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রের সপ্তম অঙ্গ মিত্র দুই প্রকার।‌ এগুলি হল—সহজ ও কৃত্রিম।


অর্থশাস্ত্র অনুসারে অমাত্য শ্রেণিভুক্ত কয়েকজন কর্মচারীর নাম লেখাে।

অর্থশাস্ত্র অনুসারে অমাত্য শ্রেণিভুক্ত কয়েকজন কর্মচারী হলেন—পুরােহিত, কোষাধ্যক্ষ, রাজদূত, সমাহতা, সন্নিধাতা, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচারক প্রভৃতি।


রাষ্ট্রের আধুনিক সার্বভৌমিকতা তত্ত্বের প্রবক্তা কে?

রাষ্ট্রের আধুনিক সার্বভৌমিতকা তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন ফরাসি রাষ্ট্র চিন্তাবিদ জাঁ বোঁদা।


কৌটিল্য বর্ণিত কয়েকজন গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার পদাধিকারীর উল্লেখ করাে।

গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে কৌটিল্য বর্ণিত কয়েকজন পদাধিকারী হলেন—অধ্যক্ষ, গােপ, স্থানিক চিকিৎসক, সংখ্যায়ক (গণনিক), সংঘকারিক (বার্তাবাহক) প্রভৃতি। এ ছাড়াও গ্রামের শান্তিরক্ষার জন্য নিযুক্ত ছিল শান্তিরক্ষক বাহিনী। শবর, চণ্ডাল, পুলিন্দ ও অরণ্যচরদের মধ্যে থেকে এই শান্তিরক্ষক বাহিনীর সদস্যদের চয়ন করা হত।


কৌটিল্যের মতে কূটনীতির সংজ্ঞা কী?

কূটনীতির সংজ্ঞা প্রসঙ্গে কৌটিল্য বলেছেন- "নরজ্ঞপৃথিবীং কৃৎস্নাং জয়েত্যেব নহীয়তে। (অর্থশাস্ত্র, ৬/১)। অর্থাৎ ন্যায় সম্পর্কে জ্ঞানী রাজা নিজের কোনো ক্ষতি না করেও সমগ্র পৃথিবী জয় করতে পারেন যে নীতির দ্বারা তা হল কূটনীতি। কৌটিল্যের কাছে এই কূটনীতির তাৎপর্য হল নিজের রাজ্যে সুস্থিতি প্রতিষ্ঠা এবং অন্য রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।


কৌটিল্যের মতে মণ্ডলতত্ত্ব কী?

কৌটিল্য তার মণ্ডলতত্ত্বে বলেছেন রাজাকে তার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হয়, যা মণ্ডল নামে খ্যাত। এই মণ্ডলতত্বে মােট ১২ জন রাজা এবং তাদের সম্পর্ক আলােচিত হয়েছে। অমাত্য, জনপদ, দুর্গ, কোশ ও বল এই পাঁচটি প্রকৃতি নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রের স্বামী বা রাজাকে ঘিরেই গড়ে ওঠে রাজমণ্ডল যার কেন্দ্রে রয়েছে বিজিগীষু রাজা।


মণ্ডলতত্বের দ্বাদশ রাজমণ্ডলগুলি কী কী?

মণ্ডলতত্ত্বের প্রথম শ্রেণিতে রয়েছেন বিজিগীষু রাজা যার সঙ্গে বাকি ১১ জন রাজার শতা ও মিত্রতার সম্পর্ক হয়। এই ১১ জনের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত পাঁচজন রাজা হলেন [1] অরি (শত্রু), [2] মিত্র (বিজিগীষু রাজার বন্ধু), [3] অরি মিত্র অর্থাৎ (শত্রু রাজার বন্ধু), [4] মিত্র মিত্র অর্থাৎ (বিজিগীষুরাজার বন্ধুর বন্ধু) ও [5] অরি মিত্র মিত্র (শত্রু রাজার বন্ধুর বন্ধু)। সপ্তম থেকে দ্বাদশ সংখ্যক রাজা হলেন- [1] পার্ষিগ্রাহ (পশ্চাদের। শত্রু), [2] আক্ৰন্দ (পশ্চাদের বন্ধু), [3] পার্ষিগ্রাহাসার (পশ্চাদের শত্রুর বন্ধু), [4] আক্রন্দসার (পশ্চাদের বন্ধুর বন্ধু), [5] মধ্যম (মাঝামাঝি), [6] উদাসীন (নিরপেক্ষ)।


কৌটিল্য রাষ্ট্রের শক্তি প্রসঙ্গে কী মতামত প্রকাশ করে‌ গেছেন?

কৌটিল্য বলেছেন রাষ্ট্রে রাজার শক্তি তিন প্রকার- [1] মন্ত্র শক্তি (মন্ত্রিদের সঙ্গে পরামর্শ ক্ষমতা), [2] প্রভু শক্তি (বাস্তব সম্পদ ও বল ক্ষমতা) [3] উৎসাহ শক্তি (রাজার ব্যক্তিগত দৈহিক ও উদ্যোগ ক্ষমতা)। এই তিন ধরনের শক্তি প্রয়োগের দ্বারা রাজা যে সফলতা অর্জন করেন তা হল মন্ত্র, প্রভু, উৎসাহ সিদ্ধি৷


জিয়াউদ্দিন বরনি রচিত দুটি গ্রন্থের নাম করাে।

সুলতানি যুগের সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রনীতিবিদ ছিলেন জিয়াউদ্দিন বরনি (১২৮৫-১৩৫৭ খ্রি.)। তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থ হল তারিখ ই-ফিরােজশাহি এবং ফতােয়া ই-জাহান্দারি।


জিয়াউদ্দিন বরনি রচিত ফতোয়া-ই-জাহান্দারির ভিত্তি কী ছিল?

জিয়াউদ্দিন বরনি ইতিহাসকে শুধুমাত্র একটি ধারাবিবরণী বা কাহিনি বলে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন ইতিহাস ধর্ম বা ঐতিহ্য নয় তা হল বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ। এই বিচারে তার ফতােয়াই-জাহান্দারির ভিত্তি ছিল পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও সত্যানুসন্ধান।


সুলতানি যুগের প্রথম ঐতিহাসিক গ্রন্থ কী? কার লেখা ?

সুলতানি যুগের প্রথম ঐতিহাসিক গ্রন্থ ছিল ‘ফতােয়াই-জাহান্দারি'। গ্রন্থটির লেখক ছিলেন সুলতানি যুগের উল্লেখযােগ্য ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রনীতিবিদ জিয়াউদ্দিন বরনি।


জিয়াউদ্দিন বরনির ইতিহাস দর্শনের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য লেখাে।

জিয়াউদ্দিন বরনির ইতিহাস দর্শনের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য - [1] বরনির ইতিহাস সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ প্রসঙ্গে হল তাঁর মত হল—ঐতিহাসিক তার লেখার মধ্যে দিয়ে সঠিকভাবে সত্যকে প্রকাশ করবেন। [2] বরনির ইতিহাস দর্শনের আর- একটি বৈশিষ্ট্য হল—ইতিহাসের সঙ্গে হাদিসের সম্পর্কস্থাপনা


ফতােয়া-ই-জাহান্দারি-তে বরনি কীভাবে বিষয়বস্তু পরিবেশন করেছেন?

ফতােয়াই-জাহান্দারি-তে বরনি, গজনীর সুলতান মামুদের জবানিতে বিষয়বস্তু পরিবেশন করেছেন। মামুদ তাঁর পুত্র ও ইসলামি শাসকদের উদ্দেশ্যে পারসিক উপাখ্যানের উদ্ধৃতিগুলি তুলে ধরেন।


ফতােয়া-ই-জাহান্দারি-তে আদর্শ সুলতান সম্পর্কে বরনির কী অভিমত প্রকাশ পেয়েছে?

বরনির মতে একজন আদর্শ সুলতান তিনি, যিনি শরিয়ত আইন চালু রাখবেন, ইসলাম বিরোধীদের দমন করবেন, অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর নীতি নেবেন, আপসহীন ন্যায় বিচার করবেন। এ ছাড়াও আদর্শ সুলতান ন্যায়পরায়ণ মুসলমানদেরই প্রশাসনিক পদগুলিতে নিয়ােগ করবেন।


বরনির রাষ্ট্রচিন্তার উৎস কী ছিল?

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তা বরনিকে প্রভাবিত করেছিল। প্লেটো রচিত 'রিপাবলিক' এবং অ্যারিস্টটল রচিত 'পলিটিক্স এই দুই গ্রন্থের মূল তত্ত্বই ছিল বরনির রাষ্ট্রচিন্তার মূল উৎস।


বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারি-তে মুখ্যত কোন্ কোন্ বিষয়গুলির উল্লেখ আছে?

বরনির ‘ফতােয়াই-জাহান্দারি’-তে মূলত ইসলামের রাজতন্ত্রের অবস্থান, দিল্লির সুলতানদের রাজতান্ত্রিক আদর্শ, তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য প্রভৃতি বিষয়গুলির উল্লেখ আছে।


ফতােয়া-ই-জাহান্দারি-তে শাসক ও রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের ব্যাপারে কী নির্দেশনা আছে?

'ফতােয়াই-জাহান্দারি'-তে শাসক ও রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের ব্যাপারে নির্দেশনাগুলি হল- [1] একটি শক্তিশালী, দক্ষও সন্তুষ্ট সমরবাহিনী গঠন; [2] পূর্ণরাষ্ট্রীয় কোষাগার স্থাপন; [3] সঠিক কর আদায় ব্যবস্থা; [4] উপযােগী গুপ্তচর ব্যবস্থা।


ফতােয়া-ই-জাহান্দারি-তে বরনির ধর্মরাষ্ট্র তত্ত্বটি কীভাবে পরিবেশিত হয়েছে?

বরনি বলেছেন- সুলতান বা শাসকগণ ইসলামের লালন-পালন বা রক্ষার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ােগ করবেন। তারা এমন এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন যেখানে ইসলাম ধর্ম সর্বতােভাবে বিকাশ লাভের সুযােগ পাবে।


জিয়াউদ্দিন বরনির রাজপদ সংক্রান্ত তত্ত্বটি কী ছিল?

জিয়াউদ্দিন বরনির রাজপদ সংক্রান্ত দুটি তত্ত্বের ধারণা মেলে। প্রথম তত্ত্বটি হল ঐতিহ্যোভূতিক, দ্বিতীয়টি হল ঐশ্বরিক ধারণায় অনুপ্রাণিত তত্ত্ব। প্রথম তত্ত্ব অনুযায়ী রাজার রাজপদ কোরান ও পয়গম্বর কর্তৃক অনুমােদিত নয়। দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী রাজা হলেন পৃথিবীতে ঈশ্বর প্রেরিত দূত, ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা ঈশ্বরের ছায়া (জিলুল্লাহ)।


বরনির মতে মধ্যযুগের সুলতানদের প্রধান দায়িত্ব কী ছিল?

বরনির মতে মধ্যযুগের সুলতানদের প্রধান দায়িত্ব ছিল সমস্ত প্রজার ধর্ম রক্ষা করা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি তাকে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা করতে হত।


থিওক্র্যাসি ও জাহান্দারি শব্দের অর্থ কী?

থিওক্র্যাসি শব্দের অর্থ হল 'ধর্মাশ্রয়ী বা পুরোহিত- তান্ত্রিক রাষ্ট্র’, ‘জাহান্দারি' শব্দের অর্থ হল 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।


'দার-উল-হারব' ও দার-উল-ইসলাম শব্দের অর্থ কী?

দার-উল-হারব শব্দের অর্থ হল 'বিধর্মীর দেশ। দার-উল-ইসলাম' শব্দের অর্থ হল 'ইসলামের পবিত্র ভূমি।


সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ছিল ধর্মীয়--এই মতের কয়েকজন সমর্থকের নাম লেখাে।

সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ছিল ধর্মীয়—এই মতের কয়েকজন সমর্থক ছিলেন ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদ, এ. এল, শ্রীবাস্তব, আর. পি. ত্রিপাঠি প্রমুখ।


সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ—এই মতের কয়েকজন সমর্থকের নাম লেখাে।

সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ এই মতের কয়েকজন সমর্থক ছিলেন—মহম্মদ হাবিব, আই.এইচ. কুরেশি, সতীশচন্দ্র প্রমুখ।


ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলতে কী বােঝায়?

ধর্মাশ্রয়ী বা পুরােহিততান্ত্রিক রাষ্ট্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল থিওক্র্যাটিক, যা গ্রিক শব্দ থিওস (অর্থ দেবতা) থেকে এসেছে। দেবতান্ত্রিক রাষ্ট্র হল ধর্মাশ্রয়ী বা পুরােহিততান্ত্রিক রাষ্ট্র। এরূপ রাষ্ট্রে ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকে এবং যাজক বা পুরােহিতদের দ্বারা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়।


ধর্মীয় রাষ্ট্রের দুটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।

ধর্মীয় রাষ্ট্রের দুটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল-[1] ঈশ্বরের প্রতিনিধি খলিফার হয়ে সুলতান রাষ্ট্র পরিচালনা করেন; [2) ঈশ্বরের নির্দেশই হল আইন, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয়।


'শরিয়ত' কী?

কোরানের ভিত্তিতে মুসলমানদের অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত কিছু আইনবিধি রচিত হয়। এই সমস্ত আইনবিধিকে শরিয়ত বলা হয়।


জিম্মি কারা?

আনুগত্য প্রদর্শন ও কর প্রদানের মধ্যে দিয়ে অমুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস ও ধর্মরক্ষার অধিকার পেত। এই অমুসলিমরা 'জিম্মি বা বিধর্মী নামে পরিচিত ছিল।


আমীর-উল-মুমিনিন বলতে কী বােঝ?

পয়গম্বর হজরত মহম্মদের দেহাবসানের পর একে একে চারজন পবিত্র খলিফা (আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলি) হন। তারা আমীর-উল-মুমিনিন বা ধর্মবিশ্বাসীদের প্রধান-হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্র ও ইসলাম ধর্ম পরিচালনা করেন।


দিল্লির সুলতানদের অনুসৃত পারসিক সাসানীয় বংশের শাসকদের রাষ্ট্রাদর্শ কী ছিল?

পারস্যের সাসানীয় বংশের শাসকদের রাজদরবার, রীতিনীতি, রাজকীয় আদবকায়দা দিল্লির সুলতানরা অনুকরণ করতেন। এই রাষ্ট্রাদর্শের মূলকথা ছিল রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিবিম্ব, রাজার মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।


সিসেরাে কে ছিলেন?

মার্ক তুল্লি সিসেরাে ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ রােমান বাগ্মী, রাষ্ট্রচিন্তাবিদ এবং আইনজ্ঞ। তিনি পূর্ব প্রচলিত রােমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যাবতীয় প্রথা রীতি নীতিকে সংশােধনের উদ্যোগ নেন এবং রােমান আইনতত্ত্বকে বিশ্বজনীনতার আদর্শে উত্তরণ ঘটান।


রােমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ সিসেরাের লেখা দুটি রাজনৈতিক গ্রন্থের নাম লেখাে।

রােমান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ সিসেরাের লেখা দুটি রাজনৈতিক গ্রন্থ হল- [1] দ্য রিপাবলিক (The Republic), [2] দ্য লজ (The Laws) I


সিসেরাের রাজনৈতিক মতবাদের ওপর কী কী প্রভাব পড়েছিল ?

সিসেরাের রাজনৈতিক মতবাদের ওপর প্রাচীন গ্রিক ভাবনা, পলিবিয়াস ও স্টয়িকদের মতবাদের প্রভাব পড়েছিল।


সিসেরাে প্রধানত কয় প্রকার আইনের কথা বলেছেন?

সিসেরাে প্রধানত দুই প্রকার আইনের কথা বলেছেন। যথা- [1] প্রাকৃতিক আইন ও [2] রাষ্ট্রীয় আইন।


সিসেরাে প্রাকৃতিক আইনের কী সংজ্ঞা দিয়েছেন?

সিসেরাের মতে, “যেসব যুক্তি প্রকৃতির আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ তা-ই হল প্রকৃত আইন। এই আইন সর্বজনীন, অপরিবর্তনীয় এবং চিরন্তন


সিসেরাে কয় প্রকার সরকারের উল্লেখ করেছেন ও কী কী?

সিসেরাে তিন প্রকার সরকারের উল্লেখ করেছেন। যথা- [1] রাজতন্ত্র, [2] অভিজাততন্ত্র ও [3] গণতন্ত্র।


প্রাকৃতিক আইন (Law of Nature ) সম্পর্কে সিসেরাের ধারণা লেখাে।

সিসেরাে বলেছেন, “সমগ্র প্রকৃতির রাজ্যে একটি আইন বিরাজ করে, যার দ্বারা সমগ্র বিশ্ব চালিত হয়। এই অপরিবর্তনীয়, শাশ্বত ও সর্বজনীন আইনই হল প্রাকৃতিক আইন।


গেটেল, সিসেরাের রাষ্ট্রনৈতিক দর্শনকে কয়টি ও কী কী ভাগে ভাগ করেছেন?

গেটেল, সিসেরাের রাষ্ট্রনৈতিক দর্শনকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন, যথা- [1] প্রাকৃতিক আইন, [2] প্রাকৃতিক সাম্য, [3] রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা।


প্রাকৃতিক আইন ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে সিসেরাের ধারণা কী ছিল?

সিসেরাে বলেছেন, "প্রাকৃতিক আইনের সঠিক প্রয়ােগের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সত্তব। সিসেরাের ধারণায় সরকারের ভিত্তি হল ন্যায়বিচার। তাই সরকারের উচিত হল—প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট আইনের সাহায্য নিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।


রাষ্ট্র সম্পর্কে সিসেরাের ধারণা লেখো।

সিসেরাে বলেছেন, রাষ্ট্র হল যুক্তিবােধ ও আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এক সামাজিক সংগঠন। সিসেরাের ধারপায় রাষ্ট্র এমন এক নৈতিক সংস্থা, যা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত। রাষ্ট্র একদিকে আইনি সংস্থা, অপরদিকে ন্যায়ের প্রতীক।


সিসেরাের রাষ্ট্রচিন্তা কোন্ দুই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল?

[1] সমকালীন রােমের জাতীয় জীবনের ক্রমিক অবনতি রােধ। [2] রােমান সমাজের নানান সমস্যা ও সংকটের সমাধান।


সিসেরাের রাষ্ট্রচিন্তার দুটি মূল বৈশিষ্ট্য লেখাে।

[1] মানুষের যুক্তি ও স্বাধীনতাকে কোনাে বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শের পরিবর্তে সমগ্র বিশ্বজগৎ ও মানবিকতার প্রেক্ষিতে বিচার করা উচিত। [2] মানুষের চিন্তা ও ভাবনাকে যদি যুক্তির পথে পরিচালিত করা যায়, তাহলে সমাজ এবং মানুষ উভয়েরই মঙ্গল।


সিসেরাের মতে, আইন কী?

আইন হল ঈশ্বরের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত মানসলােক, যা যুক্তি দিয়ে বাধা অথবা বাধ্যতার মাধ্যমে পরিচালিত করে।


সিসেরাের আইনগত ধারণার প্রকৃতি বিচার করাে।

প্রকৃতিগত বিচারে সিসেরাের আইনগত ধারণা ঐশ্বরিক তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার মতে—সর্বকালে, সকলের ওপর প্রযােজ্য প্রাকৃতিক আইনের প্রভু হলেন ভগবান। ঈশ্বরই হলেন একাধারে এই আইনের প্রণেতা, প্রয়ােগকর্তা ও ব্যাখ্যাকার।


প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ান বলতে কী বােঝ?

রােমের প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিকরা মূলত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল—[1] রাষ্ট্রীয অধিকারভােগী প্যাট্রিসিয়ান বা অভিজাত শ্রেণি এবং [2] রাষ্ট্রীয় অধিকার বঞ্চিত প্লেবিয়ান বা সাধারণ প্রজা।


ইংল্যান্ডে টিউডর বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

ইংল্যান্ডে টিউডর বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সপ্তম হেনরি। টিউডর বংশের প্রতিষ্ঠাতা সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে 'নতুন রাজতন্ত্র বলা হয়।


অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি আইন কে কবে পাস করেন?

ইংল্যান্ডের মন্ত্রী টমাস ক্রমওয়েল ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে ‘অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি পাস করেন।


পিলগ্রিমেজ অফ গ্রেস কী?

টমাস ফ্রমওয়েল কর্তৃক ইংল্যান্ডে ছােটো মঠগুলি ধ্বংস করার নীতির বিরুদ্ধে এক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর নাম ‘পিলগ্রিমেজ অফ গ্রেস’।


ব্রিটিশ রিফরমেশন পার্লামেন্টে টমাস ক্রমওয়েল ঘােষিত 'অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি’র তাৎপর্য কী?

অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি-র প্রস্তাবনায় টমাস ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডকে এক সার্বভৌম সাম্রাজ্য হিসেবে ঘােষণা করেন। এর দ্বারা ইংল্যান্ডের সব চার্চকে রাজার নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেন। এর তাৎপর্য হল—ইংল্যান্ড একস্বয়ংশাসিতস্বাধীনরাষ্ট্র, যার প্রধান হলেন রাজা। এই ইংল্যান্ডরাজ হলেন ইংল্যান্ডের সমস্ত ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক গােষ্ঠীররাজনৈতিক প্রভু এবং বিচারক।রাজার প্রতি সমস্ত শ্রেণির নাগরিকদের আনুগত্য প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।


টমাস ক্রমওয়েল কে ছিলেন?

টমাস ফ্রমওয়েল ছিলেন ইংল্যান্ডে টিউডররাজবংশের আমলের উল্লেখযােগ্য একজন মন্ত্রী। ইংল্যান্ডের চার্চের ক্ষমতা ধ্বংস করে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।


টমাস ক্রমওয়েল কীভাবে পার্লামেন্টারি আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন?

টমাস ক্রমওয়েলই প্রথম পার্লামেন্টারি আইনের গুরুত্ব অনুভব করেন। তিনি সকলক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি আইনের প্রাধান্য তুলে ধরতে শুরু করেন। তিনি রাজা অষ্টম হেনরিকে দিয়ে ঘােষণা করান যে, রাজার সার্বভৌম ক্ষমতা পালামেন্টের হাতেই নিহিত। রাজকীয় আদেশগুলিও যাতে জনগণের কাছে গ্রহণযােগ্য হয়, তার জন্য তিনি পার্লামেন্টের অনুমােদন নেন। তাঁর এই প্রচেষ্ঠার ফলে ইংল্যান্ডের বিচারকগণ পার্লামেন্টে গৃহীত আইনকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেন।


টমাস ক্রমওয়েল কীভাবে প্রাসাদ শাসনকে জাতীয় শাসনে রূপান্তরিত করেন?

রিফরমেশনের আগে ইংল্যান্ডে প্রশাসনের কেন্দ্রে ছিল রাজা ও তার প্রাসাদ কর্মচারীবৃন্দ। টমাস ক্রমওয়েল প্রথম এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটান এবং প্রশাসনের কেন্দ্রে মন্ত্রীসভাকে স্থাপন করেন। প্রশাসনের বিভিন্ন পদের প্রধান হিসেবে উনিশ জন মন্ত্রীকে নিয়ােগ করা হয়।পাশাপাশি ক্রমওয়েলের উদ্যোগে রাজার সচিবালয় গঠন ও প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদ তৈরি হয়।


টমাস ক্রমওয়েল আর্থিক-প্রশাসনিক ব্যবস্থার কী কী পরিবর্তন ঘটান?

টমাস ক্রমওয়েলের পূর্বে ইংল্যান্ড রাজের আর্থিক কাজকর্ম দেখতেন প্রাসাদের সার্ভেয়ার ও ট্রেজারারগণ।ক্রমওয়েল প্রথম অর্থবিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি করেন। চার্চের ওপর কর নির্ধারণের জন্য তৈরি হয় নতুন কোশাধ্যক্ষ পদ। রাজস্ব বিভাগের দেখাশােনার জন্য তৈরি হয় রাজস্ব আদালত। রাজস্ব বিভাগকে ক্রমওয়েল নতুনভাবে গড়ে তােলেন।


রাজা অষ্টম হেনরির আমলে টমাস ক্রমওয়েল কীভাবে ইংল্যান্ডের স্থানীয় শাসনের পুনর্গঠন করেন?

ইংল্যান্ডের স্থানীয় শাসনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে টমাস ক্রমওয়েল তিনটি কাউন্সিল গঠন করেন- [1] উত্তর ইংল্যান্ডের কাউন্সিল যার ওপর জমিদারি দেখাশােনার পরিবর্তে প্রশাসনিক ও বিচার বিষয়ক ক্ষমতা দেওয়া হয়। [2] স্কটল্যান্ডের ওয়েল্স প্রদেশে নবগঠিত কাউন্সিল, যার ওপর জমিদারদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষার ভার দেওয়া হয়। [3] পশ্চিম ইংল্যান্ডের কাউন্সিল, যামূলত বিদেশ আক্রমণপ্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত হয়।


টিউডর বংশীয় কোন্ রাজার প্রশাসনকে, কে প্রথম নব্য রাজতন্ত্র আখ্যা দেন?

টিউডর বংশীয় রাজা সপ্তম হেনরির আমলে (১৪৮৫-১৫০৯ খ্রি.) সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে এক নতুন প্রশাসনিক ধারণার উন্মেষ ঘটে। জন রিচার্ড গ্রিন তাঁর 'এ শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য ইংলিশ পিপল’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই প্রশাসনকে নব্য রাজতন্ত্র আখ্যা দেন। পরবর্তীকালে আর. ষ্টোরি, এ. এফ. পােলার্ড, সি, এইচ. উইলিয়ামস-সহ অনেকেই এই মতকে সমর্থন করেন।


কে অষ্টম হেনরির আমলে মুখ্যসচিব পদটি মন্ত্রীর পদে উন্নীত করেন? টমাস ক্রমওয়েল কোন্ কোন্ দপ্তরের দায়িত্ব নেন?

টমাস ক্রমওয়েল অষ্টম হেনরির আমলে মুখ্যসচিব পদটি মন্ত্রীপদে উন্নীত করেন। টমাস ফ্রমওয়েল নিজে রাজস্ব, অর্থনীতি এই দুই দপ্তর ছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ দপ্তরের দায়িত্ব নেন।


কীভাবে টমাস ক্রমওয়েল রাজা অষ্টম হেনরিকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করে তােলেন?

টমাস ফ্রমওয়েল প্রথমেই 'অ্যাক্ট ফর দ্য সাবমিশন অফ দ্য ক্লারজি'র দ্বারা যাজকদের রাজার অধীনে আনেন। অ্যাক্ট অফ অ্যাপিল' প্রণয়নের দ্বারা তিনি ইংল্যান্ডের সমস্ত চার্চগুলির ওপর পােপের ক্ষমতা রদ করেন। এরপরেই 'অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি’র দ্বারা রাজাকে চার্চের সর্বময় কর্তা হিসেবে স্বীকৃতি জানানাে হয়। অষ্টম হেনরি ও অ্যানের সন্তানদের বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি জানানাে হয় 'অ্যাক্ট অফ সাক্সেসানের মাধ্যমে। এভাবেই অষ্টম হেনরি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন।


জাঁ বোঁদা রাষ্ট্র ও সরকারের কী কী শ্রেণিবিভাগ করেছেন?

অ্যারিস্টটলের অনুসরণে বোদা রাষ্ট্র ও সরকারকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন, যথা—রাজতান্ত্রিক, অভিজাততান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক। বোদার মতে—মিশ্র রাষ্ট্র সম্ভব না হলেও প্রশাসন মিশ্র হতে পারে। বোঁদার ধারণায়, এগুলির মধ্যে রাজতন্ত্র শ্রেষ্ঠ হলেও তিনি বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের বিপদ ও অসুবিধা সম্পর্কে সজাগ থাকার কথা বলে গেছেন।


হবসের লেভিয়াথান গ্রন্থের রচনায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কী ছিল?

সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজা প্রথম চার্লসের শিরচ্ছেদ (১৬৪৮ খ্রি.) করে পিউরিটান বিপ্লব সম্পন্ন হয়। সমকালীন ইংল্যান্ডের সমাজে নৈরাজ্য ও শৃঙ্খলা রাজনীতিতে যে অস্থিরতা এনেছিল তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পরেছিল হবসের রাষ্ট্রচিন্তায়। ইংল্যান্ডে পিউরিটানজনিত গৃহযুদ্ধে জীবন ও সম্পত্তির ধ্বংসসাধন তার অন্তরে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল তারই ফসল ছিল লেভিয়াথান গ্রন্থটি।


রাষ্ট্রের উৎপত্তি প্রসঙ্গে টমাস হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখাে।

[1] রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে অংশগ্রহণকারীরা ছিল আদিম মানুষসমূহ। [2] শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যেই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই চুক্তি হয়।


টমাস হসের ধারণায় রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা বা সার্বভৌমিকতা বলতে কী বােঝায়?

টমাস হবসের ধারণায় জনগণের কল্যানসাধনে এবং শান্তি- শৃঙ্খলার রক্ষণাবেক্ষণে সার্বভৌম শক্তি সমস্ত সম্প্রদায়ের হয়ে যে ব্যবস্থা নিত, তা হল সার্বভৌমিকতা।


টমাস হবস রচিত লেভিয়াথান গ্রন্থটি কয়টি ও কী কী ভাগে বিভক্ত?

টমাস হবস রচিত 'লেভিয়াথান গ্রন্থটি চার অংশে বিভক্ত। এই চারটি অংশ হল- [1] মানুষ [2] রাষ্ট্র [3] খ্রিস্টীয় রাষ্ট্র [4] তমসার রাজ্য। ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই গ্রল্থেরাজনীতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত হবসের পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব পরিবেশিত হয়েছে।


রাষ্ট্র সম্পর্কে জন লকের ধারণা কী ছিল?

জন লকের ধারণায় রাষ্ট্র তিনটি ক্ষমতার সমন্বয়ে পঠিত। এই তিনটি ক্ষমতা হল—আইনগত ক্ষমতা, প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। এগুলির মধ্যে লক আইনগত ক্ষমতাকে সর্বোৎকৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।


জন লকের সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারণাটি লেখাে।

লকের ধারণায় জনগণ ভােটাধিকারের মাধ্যমে সংসদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত বা ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকারী। লকের মতে, কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা ও মতামতের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির প্রকাশ ঘটে।


আইনের শাসন সংক্রান্ত জন লকের ধারণাটি লেখো।

জন লক ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে আইনের শাসনাধীনে নিয়ে আসার সমর্থক ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রীয় আইনের নিয়ন্ত্রণ আরােপিত হােক। লকের ধারণায় আইন বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে। এই বিভাগটি জনগণের সাধারণ অধিকারগুলি সুরক্ষিত করার পাশাপাশি তার নিরাপত্তাও রক্ষা করে।


জন লকের পুরসমাজ (Civil Society) তত্ত্বটির উল্লেখ করাে।

পুরসমাজ ধারণাটির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি ও গােষ্ঠীর স্বাভাবিক অধিকারের স্বীকৃতি, ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি, ব্যক্তি স্বতন্ত্রবাদ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। জন লক পুরসমাজ ধারণাটিকে প্রকৃতির রাজত্বের বিপরীত অবস্থার প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন। লকের ধারণায় সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণের বাইরে ব্যক্তির যে অধিকার রয়েছে, অর্থাৎ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত ব্যক্তি অধিকারের ক্ষেত্র‌ হল পুরসমাজ।


জাঁ জ্যাক রুশাের রাষ্ট্রদর্শনের মূল বিষয় কী ছিল?

রুশাের রাষ্ট্রদর্শনের মূল বিষয় ছিল সামাজিক চুক্তিতত্ত্ব, যাতে বলা হয় প্রকৃতির রাজ্যের মানুষেরা চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে। রুশাের ধারণায় রাষ্ট্র হল এক উন্নয়নশীল, সুসভ্যকারী, যাবনিক (Hellenising) এবং শিক্ষাদায়ী শক্তি।


রুশাের সাধারণ ইচ্ছা (General Will)-তত্ত্বটি কী?

জাঁ জ্যাক রুশাের সামাজিক চুক্তিতত্ত্বের প্রধান আলােচিত বিষয় হল সাধারণ ইচ্ছা। রুশোর ধারপায় সামাজিক চুক্তির মধ্য দিয়ে যে মিলিত শক্তি গড়ে ওঠে তা হল সাধারণ ইচ্ছা। এধরনের ইচ্ছা সমাজের প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে যা সকলে মেনে চলতে বাধ্য।


ব্যারন চার্লস ডি মন্তেস্কুর ধারণায় প্রতিটি সরকারের কটি ও কী কী ক্ষমতা আছে?

মন্তেঙ্কুর ধারণায় প্রতিটি সরকারের তিনপ্রকার ক্ষমতা আছে, যথা—আইনবিভাগীয়, শাসনবিভাগীয় ও বিচারবিভাগীয়। প্রথম ক্ষমতা বলে শাসক আইন প্রণয়ন, সংশােধন বা বাতিল করেন। দ্বিতীয় ক্ষমতা বলে শাসক যুদ্ধ বা শান্তি ঘােষণা করেন। আর তৃতীয় ক্ষমতা বলে রাজা অপরাধীদের শাস্তি দেন বা ব্যক্তি বিরােধ মেটান।


হিতবাদ কী?

'হিতবাদ-এর মূলকথা হল—সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সর্বাধিক সুখলাভ। এই মতবাদ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তির ইচ্ছার মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধলে রাষ্ট্রের কর্তব্য হল—সর্বাধিক মানুষের সর্বোচ্চ পরিমাণ হিতসাধন নীতি কার্যকর করা।


কয়েকজন হিতবাদী রাষ্ট্রদার্শনিকের নাম লেখো।

কয়েকজন হিতবাদী রাষ্ট্রদার্শনিক হলেন—জেরেমি বেন্থাম, জেমস মিল ও পুত্র জন স্টুয়ার্ট মিল, জন অস্টিন, হবহাউস প্রমুখ। এই সমস্ত হিতবাদীদের ধারণায়, রাষ্ট্র হল মানুষের দাবিপূরপ ও ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানাের প্রতিষ্ঠান।


The Law' গ্রন্থের রচয়িতা কে?

'The Law' গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন ক্লড ফ্রেডরিখ বাসতিয়াৎ।


বেন্থামের লেখা কোন্ গ্রন্থগুলিতে তার রাষ্ট্রধারণা উল্লেখ মেলে?

ফ্র্যাগমেন্ট অব গভর্নমেন্ট, ডিফেন্স অব ইউজুয়ারি, ম্যানুয়াল অব পলিটিক্যাল ইকনমি, কনস্টিটিউশনাল কোড গ্রন্থগুলিতে বেল্থামের রাষ্ট্রধারণার উল্লেখ মেলে।


রাষ্ট্র সম্পর্কে জেরেমি বেন্থামের ধারণাটি কী?

বেন্থামের ধারণায় মানুষ নিজেদের সুখ বা আনন্দকে‌ বাড়ানাের লক্ষ্যে জোটবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল। জনগণের সুখ বা আনন্দ বাড়ানাের জন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে।


জন স্টুয়ার্ট মিলের রাষ্ট্রভাবনার উল্লেখ করাে।

জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে, উদারনৈতিক সমাজে রাষ্ট্রের কাজ হল ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়। কম বলপ্রয়ােগের দ্বারা অধিক সংখ্যক মানুষের জীবনকে মানবিক করে তােলার কাজে রাষ্ট্র আইনকে ব্যবহার করবে।


জর্জ উইলহেম ফ্রেডরিক হেগেল-এর রাষ্ট্রদর্শনের পরিচয় দাও।

হেগেলের ধারণায় রাষ্ট্র এক অতিমানবীয় নৈতিক সংগঠন, যা অন্যান্য সমস্ত সংস্থার উর্ধ্বে। রাষ্ট্র চুক্তির ফলশ্রুতি নয়, তা হল চেতনার বিবর্তন রাষ্ট্র আসলে ব্যক্তির প্রকৃত ব্যক্তিত্বের স্রষ্টা ও রক্ষাকর্তা। হেগেলের মতে"রাষ্ট্রের ভিত্তি বলপ্রয়ােগ নয়, শাসিতের ইচ্ছা৷”


স্যাট্রাপ কথাটির অর্থ কী?

প্রাচীন পারসিক ব্যাখ্যা অনুসারে 'স্যাট্রাপ শব্দটির অর্থ হল সাম্রাজ্যের রক্ষাকর্তা।


স্যাট্রাপ (Satrap) কী?

পারস্যের আকিমেনীয় সাম্রাজ্যের প্রাদশিক শাসনকর্তাদের স্যাট্রাপ বলা হত। এরা সাম্রাজ্যের সংকট মােকাবিলায় এবং সাম্রাজ্যের বিস্তার ও উন্নতিতে প্রধান দায়িত্ব পালন করত। প্রকৃত অর্থে স্যাট্রাপরা সমগ্র আকিমেনীয় সাম্রাজ্যের ওপর শাসন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করত।


স্যাট্রাপদের প্রধান কাজগুলি লেখাে।

স্যাট্রাপদের প্রধান কাজ ছিল—ট্যাক্স আদায় ও জমা দেওয়া, সেনাদের নিয়ােগ করা, আঞ্চলিক আমলাদের নিয়ােগ করা। পৌর ও ফৌজদারি অপরাধের বিচার করা, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ বা সমস্যার মােকাবিলা করা, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরােধ করা ইত্যাদি।


স্যাট্রাপীয় প্রশাসনিক কাঠামাের ধারণা মেলে এমন তিনটি উৎসের নাম লেখাে।

[1] গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাসের তথাকথিত নােমাই তালিকা (Nomai List)। [2] ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের বিভাগ সম্পর্কে আলেকজান্ডারের আমলের ঐতিহাসিকদের বিবরণ। [3] আকিমেনীয় সাম্রাজ্যের লিপিসমূহ।


স্যাট্রাপিগুলির কীরূপ বিভাজন ছিল?

স্যাট্রাপিদের বেশ কিছু বৃহৎ ও ক্ষুদ্র স্যাট্রাপিতে ভাগ করা হয়।Great satrapy বা বৃহৎ স্যাট্রাপির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—পারসা বা পারসিস, মাডা বা মিডিয়া, পাৰ্ডা বা লিডিয়া, ব্যাবিরাস বা ব্যাবিলনিয়া প্রভৃতি। বৃহৎ স্যাট্রাপিগুলি আবার কেন্দ্রীয়-মুখ্য ও মুখ্য স্যাট্রাপিতে বিভক্ত ছিল। কয়েকটি কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র স্যাট্রপি হল -পার্থিয়া, আরমেনিয়া, নিম্ন মিশর ইত্যাদি।


পারসি জাতির উৎস লেখাে।

পারস্য (Persia) শব্দের উৎস 'pars' শব্দ থেকে পার্স প্রাচীন পারসিয়দের ব্যবহৃত ভাষা। পারস্যে বসবাসকারী জনগােষ্ঠী পারসি (Persians) নামে পরিচিত। আধুনিক পারসিয়দের ফার্স (Fars) বা ফার্সিস্তান (Farsistans)- এর গােষ্ঠীবাসী বলা হয়। তাই এরা ফারসি বা পারসি।


পারসিকরা আকিমেনীয় নামে পরিচিত কেন?

পারসিকরা প্রথমে আধুনিক ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বসবাস করত। এখানে পাসারগ্যাডে ও পার্সেপলিস নামে দুটি নগর গড়ে ওঠে, যেগুলি গ্রিকদের কাছে পারসা ও পারসিস নামে পরিচিত ছিল। এদের পূর্বপুরুষ ছিলেন একেমেনিস (Achaemenes)। তাই এরা আকিমেনীয় নামে পরিচিত ছিল।


ম্যান্ডারিন বলতে কী বােঝ?

ম্যান্ডারিন হল সাম্রাজ্যবাদী চিনের আমলা। চিনা শাসনতন্ত্রে যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সমাজে শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে তারাও সম্রাটের সঙ্গে স্বর্গের অনুশাসন লাভের অংশীদার ছিলেন।


চিনে কেন ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে?

প্রাচীন চিনে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী বা আমলারা অনেক সময় সম্রাটকে এড়িয়ে জনগণকে বেশি গুরুত্ব দিত। তাই এই আমলা তন্ত্রের পরিবর্তেৎচিনা সম্রাট ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার প্রচলন ঘটান।


ম্যান্ডারিনদের যােগ্যতা বা গুণাবলি লেখাে।

ম্যান্ডারিনদের শাসনতান্ত্রিক বিষয় অপেক্ষা ধ্রুপদি চিনা ঐতিহ্য সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞানী হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। ম্যান্ডরিনকে একজন বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হত না, কাম্য ছিল তিনি একজন পণ্ডিত ব্যক্তি হবেন।


ম্যান্ডারিন শব্দটি চৈনিকভাষাতত্ত্বে কীভাবে ব্যবহৃত হয়?

চিনের উচ্চপদস্থ আমলাদের ব্যবহৃত একগুচ্ছ বৈচিত্রপূর্ণ ভাষা ছিল ম্যান্ডারিন, যা মিং ও কিং আমলের একটি চিনা ভাবাকে বােঝায়। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম চিনে এক উপভাষা হিসেবেও এর প্রচলন ছিল। অন্য ভাষার তুলনায় এই ভাষাই সাহিত্যে অধিক ব্যবহৃত হয় এবং চিনারাও এই ভাষাতেই অধিক কথা বলা শুরু করে।


ম্যান্ডারিন শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ লেখাে।

'ম্যান্ডারিন শব্দটি আসলে সাম্রাজ্যবাদী চিনের উচ্চপদস্থ অফিসারদের বােঝাত। ইংরেজি ম্যান্ডারিন শব্দটি এসেছে পাের্তুগিজ ‘mandarim', মালয়দের menteri, হিন্দির mantri, সংস্কৃত mantrin অর্থাৎ 'minister on counsellor প্রভৃতি শব্দ থেকে।


কীভাবে ম্যান্ডারিন ভাষার প্রচলন হল?

ষােড়শ শতকে জেসুইট মিশনারীরা এই ভাষাটি শেখার পর এর নাম দিল ম্যান্ডারিন। ইতিপূর্বে এর প্রাচীন চিনা নাম ছিল গুয়াহুয়া (Guanhua) অর্থাৎ চিনা উচ্চপদস্থ অফিসারদের ভাষা।


ভারতে ইক্তা ব্যবস্থার কীভাবে সূচনা ঘটে?

মহম্মদ ঘুরির আমলে উত্তর ভারতের অধিকৃত অঞ্চলগুলি থেকে কর গ্রহণের বিনিময়ে সেনাপতিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলার অভাবে এদের হাতে কিছু প্রশাসনিক দায়িত্বও দেওয়া হয়। এই সমস্ত অঞ্চলগুলি ইত্তা এবং এর দায়িত্বপ্রাপ্তরা ইত্তাদার বা মাকৃতি' নামে পরিচিত হয়। সুলতান ইলতুৎমিস ভারতে ইক্তা ব্যবস্থার প্রচলন করেন।


ইক্তার বিভাগগুলি লেখাে।

আবুল হাসান মাওয়ারদি ইত্তাকে দুভাগে বিভক্ত করেন, যথাইক্তাই-তমলিক' এবং ইত্তা-ই-ইন্তিয়লাল। প্রথমটি সরকারি প্রশাসন, রাজস্ব বণ্টন ও তা আদায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার দ্বিতীয়টি ছিল সরকারি অনুদান।


খােয়াজা কারা? এদের কাজ কী ছিল?

ইস্তাদারের ফাঁকি রােধের লক্ষ্যে বলবন প্রতিটি ইক্তায় একশ্রেণির হিসাব পরীক্ষক নিয়ােগ করেন, এদের নাম হল খােয়াজা। এদের কাজ ছিল ইক্তার আয়, ব্যয় ও উদ্বৃত্ত অর্থের হিসাব রাখা।


ইক্তা কী?

ভারতে সুলতানি শাসকদের আমলে কৃষকদের কাছ থেকে উদ্বৃত্ত শস্য ও ভূমিরাজস্ব সংগ্রহ করা এবং শাসকগােষ্ঠীর মধ্যে বণ্টনের যে রীতি প্রবর্তিত হয়, তাকে ইত্তা ও সেই ইত্তার প্রাপককে বলা হত ইস্তাদার বা মাকতি।


ইক্তাদারদের প্রধান পালনীয় কর্তব্যগুলি কী ছিল?

[1] কৃষকদের কাছ থেকে নিয়মিত রাজস্ব আদায় করা। [2] ইত্তার আয় থেকে সেনাবাহিনী পােষণ করা এবং প্রয়ােজনে সুলতানকে সেনা সরবরাহ করা। [3] উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া।


সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় ইক্তার চরিত্রে কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?

সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বশাসিত অঞ্চলগুলি ধীরে ধীরে ইত্তায় পরিণত হয়। ইলতুৎমিসের আমল থেকেই ইত্তাদারদের বদলির নীতি চালু হয়। সুলতানের নির্দেশে উদ্বৃত্ত রাজস্ব ইক্তার প্রকৃত আয় নির্ধারণের জন্য আলাদা হিসাবরক্ষক নিয়ােগ করা হয়। সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দূরবর্তী অঞ্চলগুলিকে ইক্তা দেওয়া হলেও নিকটবর্তী অঞ্চলগুলিকে খালিসাভুক্ত করা হয়।


ইলতুৎমিস কীভাবে ইক্তা প্রথার সূচনা ঘটান?

গঙ্গা যমুনার মধ্যবর্তী উর্বর দোয়াব অঞ্চলে ইলতুৎমিস প্রায় ২ হাজার জন তুর্কি সেনাকে ইত্তা দান করেন। এরা ইক্তা গ্রহণের বিনিময়ে আঞ্চলিক সুরক্ষা এবং কৃষি কাজের নিশ্চয়তা দেয়। এইভাবে সূচনা ঘটে ইত্তা প্রথার।


ভারতে কে ইক্তা প্রথার প্রবর্তন করেন?

ভারতে ইক্তা প্রথার প্রবর্তন করেন সুলতান ইলতুৎমিস। ইক্তার প্রাপককে বলা হত ইক্তাদার বা 'মাকৃতি।


ম্যান্ডারিন ও ইক্তা প্রথা কোন্ কোন্ দেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল?

ম্যান্ডারিন চিনের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে এবং ইক্তা প্রথা সুলতানি যুগে ভারতের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল।


'মনসবদার বলতে কী বােঝ?

মােগল সম্রাট আকবর ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন ঘটান। মনসবদারি প্রথা ছিল একটি পারসিক প্রথা। মনসব' শব্দের অর্থ হল সরকারি পদমর্যাদা। বিভিন্ন স্তরের মনসব গ্রহীতাগণ মনসবদার নামে পরিচিত ছিলেন।


কে, কবে মনসবদারি প্রথা চালু করেন?

মােগল সম্রাট আকবর ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মনসবদারি প্রথা চালু করেন। মনসব' শব্দের অর্থ হল 'পদমর্যাদা।


তনখা জায়গির’ বলতে কী বােঝ?

মােগল সম্রাট আকবর মনসবদারকে নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গির দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এই জায়গিরদারি ব্যবস্থায় স্থায়ী জায়গিরকে বলা হয় তনখা জায়গির।


মনসবদারদের বৈশিষ্ট্য লেখাে।

[1] প্রতিটি মনসবদার নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা রাখত এবং প্রয়ােজনে সম্রাটকে সৈন্যের জোগান দিত। [2] যােগ্যতা অনুযায়ী মনসবদার নিযুক্ত হতেন। [3] মনসবদারদের নিয়ােগ, পদোন্নতি, বরখাস্ত সবই সম্রাটের ইচ্ছাধীন ছিল।


মনসবদারের বেতন ও পদমর্যাদা লেখাে।

মনসবদাররা নগদে এবং জমি বন্দোবস্তের মাধ্যমে বেতন পেতেন। একশত জাঠবিশিষ্ট মনসবদারদের বেতন ছিল পাঁচশাে টাকা|প্রাপ্য বেতন থেকে মনসবদারগণ তাদের অধীনস্থ সেনাবাহিনীর ব্যয় নির্বাহ করতেন। কোনাে মনসবদার পদমর্যাদা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে তার পদ কেড়ে নেওয়া হত।


মনসবদারদের বিভিন্ন স্তর কী?

অশ্ব ও সেনা সংখ্যার ভিত্তিতে মনসবদারি ব্যবস্থা ৩৩টি স্তরে বিভক্ত ছিল। সর্বনিম্ন স্তর ছিল দশ আর সর্বোচ্চ স্তর ছিল বারাে হাজার। তবে সম্রাটের নিকট আত্মীয়েরা ও চরম বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিরাই সর্বোচ্চ স্তরের মনসবদারি পেতেন।


মনসবদারি প্রথার দুটি গুরুত্ব লেখাে।

[1] সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে: গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে মনসবদাররা সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। তাই পর্যটক বানিয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনসবদারদের মােগল সাম্রাজ্যের স্তম্ভ বলে বর্ণনা করেছেন। [2] সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে: মনসবদারদের দক্ষতা ও সেবার (Service) ফলে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মােগল সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয়।


মনসবদারি প্রথার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখাে।

[1] শ্রেণিবিভাগ: দশজন থেকে বারোহাজার সেনার অধীশ্বর মনসবদাররা তেত্রিশটি স্তরে বিভক্ত ছিল| সাত হাজারি, অষ্ট হাজারি ও দশ হাজারি মনসব সাধারণত রাজপরিবারের সদস্যরাই লাভ করত। [2] জায়গির প্রদান: মনসবদাররা সেনাবাহিনীর ব্যয় নির্বাহের জন্য নগদ বেতন বা জায়গির পেতেন। বিনিময়ে তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা নিয়ে যুদ্ধের সময় মােগল বাহিনীতে যােগ দিতে হত।


মনসবদারি প্রথার অঙ্গ হিসেবে জাঠ প্রথা কী ছিল?

'জাঠ-এর অর্থ হল পদমর্যাদা এবং মনসবদারের অধীনস্থ অশ্বারােহী ও পদাতিক সেনার মিলিত যােগফল। অর্থাৎ জাঠ পদের ভিত্তিতে একজন মনসবদারের বেতন, মর্যাদা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট হত।


মনসবদারি প্রথার অঙ্গ হিসেবে সওয়ার প্রথা কী?

'সওয়ার-এর অর্থ হল, একজন মনসবদার তাঁর অধীনে প্রকৃত প্রস্তাবে যতজন অশ্বারােহী সেনা পােষণ করতেন তার হিসাব। অর্থাৎ সওয়ার পদ দ্বারা মনসবদারদের অধীনস্থ অশ্বারােহী বাহিনীর সংখ্যা নির্দিষ্ট হত।


দাগ চিহ্নিতকরণের রীতিটি কী ছিল?

আকবরের আমলে স্থির হয়েছিল মনসবদাররা নিজ নিজ পশু দাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কোনাে অশ্বারোহী ‘সিহ-অম্প’ অর্থাৎ ৩টি ঘােড়ার সওয়ার হলে, তাকে ৩টি, 'দো- অস্প অর্থাৎ ২টি ঘােড়ার সওয়ার হলে, তাকে ২টি এবং ইয়াক-অস্প' অর্থাৎ ১টি ঘােড়ার সওয়ার হলে তাকে ১টি অশ্ব দাগ-এর জন্য পেশ করতে হবে।