তাম্র-প্রস্তর যুগ (Chalcolithic Age)-এর সংস্কৃতির পরিচয় দাও।

সূচনা: মানুষ যে যুগে পাথরের ব্যবহারের পাশাপাশি ধাতু হিসেবে তামার ব্যবহারও শুরু করেছিল সেই যুগ হল তাম্র-প্রস্তর যুগ। মানবজাতির অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই যুগ প্রুত্বপূর্ণ সূচনা নেয়। প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া ও ভারতে তাম্র প্রস্তর যুগের বহু নিদর্শন মিলেছে।


তাম্র-প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির পরিচয়

[1] সময়কাল: নব্য প্রস্তর যুগ শেষ হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার অব্দ নাগাদ। ঐতিহাসিকদের অনুমান এরপর থেকেই শুরু হয়েছিল তাম্র-প্রস্তর যুগ। আধুনিক ধারণায় তাম্র-প্রস্তর যুগের সময়কাল বিস্তৃত ছিল ৮০০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত।


[2] আবিষ্কার: নব্য প্রস্তর যুগের শেষে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শেখে। মানুষ দেখল তামার আকরিককে পােড়ানাের পর তা থেকে তামা মেলে। তামা আবিষ্কারের ফলে যান্ত্রিক কৌশলেরও উন্নতি ঘটল।


[3] তামার ব্যবহার: পাথরে মিশে থাকা তামাকে আগুনে গলিয়ে তাম্র-প্রস্তর যুগের মানুষ নিরেট তামা বের করতে শেখে। এরপর উত্তপ্ত অবস্থায় থাকা নরম তামাকে ছাঁচে ফেলে নানা ধরনের জিনিস যেমন লাঙলের ফলা, তিরের ফলা, কুড়ােল, বর্শা প্রভৃতি হাতিয়ার তৈরি করা হয়।


[4] নিদর্শন: আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে ভারতবর্ষ, মেসােপটেমিয়া, এশিয়া মাইনর, গ্রিস প্রভৃতি দেশে ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হয়। ভারতের ক্ষেত্রে মেহেরগড় সভ্যতায় ৪৩০০- ৩৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তামা গলাবার কৌশল প্রচলিত হয় বলে মনে করা হয়।


[5] স্থায়ী বসতির মানোন্নয়ন: মানুষের যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি জীবনে প্রবেশ এই পর্বে আরও উন্নত রূপ লাভ করে। বড়াে বড়াে নদীর তীরেই মূলত কৃষিজীবী মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। সময় এগােনাের সঙ্গে সঙ্গে বসতির সংখ্যা বেড়ে ছােটো ছােটো গ্রাম গড়ে উঠতে থাকে এবং রােদে শােকানাে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি শুরু হয়।


[6] সমাজ


  • পুরুষদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি: তাম্র-প্রস্তর যুগে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ গড়ে ওঠে। ফলে পূর্বেকার মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অবসান ঘটে। পারিবারিক ও সামাজিক কর্তৃত্বের রাশ চলে যায় পুরুষদের হাতে পুরুষরা হয়ে ওঠে পরিবার, দল ও জাতির প্রধান।


  • পেশাভিত্তিক গােষ্ঠী: এসময় সমাজে পেশাভিত্তিক নানা গােষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। যেমন—কৃষিজীবী গােষ্ঠী, পশুপালক গােষ্ঠী, কারিগর গােষ্ঠী, বণিক গােষ্ঠী প্রভৃতি। কৃষির সঙ্গে পশুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় কৃষি ও পশুপালক উভয় গােষ্ঠী সমাজে পাশাপাশি বাস করতে থাকে।


  • গােষ্ঠী সংঘাত: এক-একটি গােষ্ঠী নিজেদের পরিচালনার জন্য এক-একজন নেতা নির্বাচন করে। তার নেতৃত্বে সবল গােষ্ঠী দুর্বল গােষ্ঠীর ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে সমাজে এক সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়।


  • রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি নির্মাণ: উদ্বৃত্ত সম্পদের অসম বণ্টনের ফলে সমাজে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির সৃষ্টি হয়। ধনীরা অর্থবলকে কাজে লাগিয়ে শাসক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। শাসক শ্রেণির হাতে যাবতীয় ক্ষমতা থাকে। এভাবে শ্রেণি বিভক্ত সমাজ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি নির্মাণ করে।


[7] অবদান: তাম্র-প্রস্তর যুগ মানুষের জীবনযাত্রার বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে এল।


  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: এযুগে তৈরি হওয়া ধাতুর নানা ধরনের পাত্রে রান্না করা খাবারের স্বাদ আগের থেকে অনেকগুণ ভালাে হল। পাত্রে নানা ধরনের খাদ্য তৈরি সহজ হওয়ায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হল।


  • যােগাযােগে উন্নয়ন: নতুন পাথরের যুগে আবিষ্কৃত চাকায় তামাকে ব্যবহার করে চাকার উন্নতি ঘটানো হল। তামা দিয়ে তৈরি অনেক শক্তপােক্ত চাকার সাহায্যে বহুদূর পর্যন্ত যােগাযােগ করা সম্ভব হল।


  • বাজারের উদ্ভব: তাম্র প্রস্তর যুগেই সর্বপ্রথম নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বাজার গড়ে ওঠে। বিভিন্ন গােষ্ঠীর মানুষ তাদের উৎপাদিত দ্রব্য বেচাকেনার জন্য এই বাজারে এসে জড়াে হয়।


সময়ের ধারায় নবজীবীয় পর্বভুক্ত নানা যুগের পরিচয় দাও।


পুরা প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনের নানা দিকের ওপর আলােকপাত করাে।


মধ্য প্রস্তর যুগের মানব সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক বর্ণনা করাে। লুইস হেনরি মরগ্যানের মতানুযায়ী মানব-সমাজের ক্রমবিকাশের ধাপকে ব্যাখ্যা করাে।


নব্য প্রস্তর বা নতুন পাথরের যুগের মানবজীবনের নানা দিকগুলি উল্লেখ করাে।


নব্য প্রস্তর যুগের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল? এ যুগের চাষবাস সম্পর্কে লেখাে।


প্রাচীন প্রস্তর ও নব্য প্রস্তর উভয় যুগের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর পার্থক্যগুলি উল্লেখ করাে। উভয় যুগের হাতিয়ারের পার্থক্যগুলি লেখাে।


কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়?