পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণগুলি উল্লেখ করাে।

সূচনা: বিভিন্ন বর্বর জাতির আক্রমণে ইউরোপে চরম অশান্তি ও নৈরাজ্য দেখা দিলে খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটতে থাকে। সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের বিভিন্ন কারণ ছিল।


পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণ

[1] অনুগত-পৃষ্ঠপােষক সম্পর্কের ভূমিকা: প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যে অনুগত-পৃষ্ঠপােষক সম্পর্ক নামে এক ধরনের সম্পর্ক প্রচলিত ছিল। এই সম্পর্ক অনুসারে, ধনী অভিজাতরা তাঁদের অনুগত সাধারণ মানুষদের রক্ষার দায়িত্ব নিতেন। বিনিময়ে অনুগতরা ধনী অভিজাত ব্যক্তিটিকে সেবা ও সীমাহীন আনুগত্য প্রদান করত। এই সম্পর্ক সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল।


[2] কমিটেটাস প্রথার ভূমিকা: জার্মানিতে প্রচলিত কমিটেটাস' (Comitatus) প্রথা অনুসারে, কিছু স্বাধীন যােদ্ধা স্বেচ্ছায় কোনাে উপদলীয় ক্ষমতাশালী নেতার অধীনতা মেনে তার স্বার্থপূরণের অঙ্গীকার করত। ক্ষমতাশালী সেই নেতা বা সেনাপতি তার অধীনস্থ যােদ্ধাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিতেন। এই রীতি পরবর্তীকালে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামাে নির্মাণে সহায়তা করেছিল।


[3] আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা: ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যের পতনের পরবর্তীকালে ইউরােপে ব্যাবসাবাণিজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়। ফলে নগরজীবন ভেঙে পড়ে, নগরের অবক্ষয় শুরু হয় এবং গ্রামীণ অর্থনীতির প্রসার ঘটতে থাকে। অর্থনীতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে জমি। রােমান ও জার্মানি অভিজাত ও ভূস্বামীরা এর ফলে নিজেদের ভূসম্পত্তি বাড়ানাের দিকে বেশি নজর দেয়।


[4] বর্বর জাতির আক্রমণের প্রভাব: ক্যারােলিঞ্জীয় রাজকুমারদের মধ্যে সংঘর্ষ, ক্ষয়িম্বু পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যে ম্যাগিয়ার, সারাসেন, ভাইকিং প্রভৃতি বর্বর জাতিগুলির আক্রমণ ইত্যাদি কারণে ইউরােপে চরম নৈরাজ্য ও অশান্তি দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার প্রয়ােজনে তারা উচ্চ পর্যায়ের কোনাে ভূস্বামীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে থাকে।


[5] স্থানীয় শক্তিশালী প্রভুর ভূমিকা: ইউরােপের বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের পরিস্থিতিতে জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার তাগিদে সাধারণ মানুষ তার জমি স্থানীয় ক্ষমতাশালী প্রভু বা ভূস্বামীর হাতে তুলে দিয়ে তার কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করে| প্রভুও কিছু শর্তের বিনিময়ে অধস্তন ব্যক্তিটিকে রক্ষার আশ্বাস দেয়।


[6] উর্ধ্বতন ক্ষমতাশালী প্রভুর ভূমিকা: স্থানীয় এই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি আবার একই ধরনের শর্তের বিনিময়ে তাঁর। অধীনস্থ জমিজমা তার উর্ধ্বতন আরও বেশি শক্তিশালী ভূস্বামীর হাতে তুলে দিয়ে আপন আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করে। এভাবে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সামন্ততন্ত্রের নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র ও স্তর বিন্যাসের একটি পিরামিড কাঠামাে গড়ে ওঠে।


[7] মুসলিম আক্রমণের প্রভাব: শার্লামেনের মৃত্যুর (৮১৪ খ্রি.) পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার সুযােগে ইউরােপে মুসলিম ও অন্যান্য বৈদেশিক জাতিগুলির আক্রমণ শুরু হয়। নিরাপত্তার তাগিদে মানুষ তার উর্ধ্বতন শক্তিশালী ভূস্বামীর কাছে তার সমস্ত জমিজমা অর্পণ করে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্তপ্রভুর উত্থান ঘটে। এরা আবার একইভাবে তাদের উর্ধ্বতন প্রভুর প্রতি আনুগত্য জানায়।


উপসংহার: খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে উপরোক্ত বিভিন্ন কারণে ইউরােপের রাষ্ট্রীয় কাঠামােয় প্রভু ও আনুগত্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর ভিত্তিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর অর্থাৎ সম্রাট থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তর অর্থাৎ সাধারণ কৃষক পর্যন্ত একটি অবিচ্ছেদ্য সেবা বা আনুগত্যের বন্ধন ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের জন্ম দেয়।


প্রাচীন ভারতীয় ক্রীতদাসরা কী ধরনের অধিকার ও সহানুভূতি পাওয়ার অধিকারী ছিল? প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিতে দাসপ্রথার কতটা ভূমিকা ছিল?


প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল? প্রাচীন ভারতীয় দাস কীভাবে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারত?


সুলতানি যুগে ভারতে ক্রীতদাস প্রথার পরিচয় দাও। এ যুগে ভারতে ক্রীতদাস সৃষ্টির প্রক্রিয়া ও ক্রীতদাসদের অবস্থা উল্লেখ করাে।


ভারতে সুলতানি আমলে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত? সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কতটা ভূমিকা ছিল?


সামন্ততন্ত্র বলতে কী বােঝায়? ইউরােপে কখন এবং কীভাবে সামন্ততন্ত্রের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল?


ধ্রুপদি যুগের সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিতর্কটি কী? মধ্যযুগের ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের কয়টি ও কী কী যুগ লক্ষ করা যায়?


মধ্যযুগে ইউরােপে সামন্তপ্রভুদের প্রধান ক্ষমতা ও কার্যাবলি উল্লেখ করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)