প্রবন্ধ লেখাে : হরপ্পা সভ্যতা

সূচনা: আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চল জুড়ে এক সুপ্রাচীন সভ্যতার উদয় ঘটে, ইতিহাসে যা হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত। মৌলিকত্বে, অভিনবত্বে ও উৎকর্ষে এই সভ্যতা বিশ্বের যে-কোনাে প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে তুলনীয়।


হরপ্পা সভ্যতা

[1] আবিষ্কার: ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন অধিকর্তা স্যার জন মার্শালের তত্ত্বাবধানে দয়ারাম সাহানি পাঞ্জাবের মন্টগােমারি জেলায় ইরাবতী (রাভী) নদীর তীরে হরপ্পায় এক উন্নত নগর সভ্যতা আবিষ্কার করেন (১৯২১ খ্রি.)। পরে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরে সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় মহেনজোদারাে নামক স্থানে এক উন্নত নগর সভ্যতার সন্ধান পান (১৯২২ খ্রি.)।


[2] নামকরণ: জন মার্শাল এই সভ্যতার নাম দেন ‘সিন্ধু সভ্যতা। সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত হওয়ায় তিনি এরূপ নামকরণ করেন। সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলের একাধিক প্রত্নস্থলের মধ্যে হরপ্পা নামে প্রত্নক্ষেত্রই সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়। তাই শেষপর্যন্ত এই সভ্যতার নামকরণ করা হয় ‘হরপ্পা সভ্যতা।


[3] কালনির্ণয়: লিখিত তথ্যের অভাবের জন্য সিন্ধু বা হরপ্পা‌ সভ্যতার সঠিক কালনির্ণয় আজও সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদগণ খননকার্য থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই সভ্যতার উত্থান ও পতনের কালনির্গয়ের চেষ্টা করেছেন। [i] স্যার জন মা্শালের মতে হরপ্পা সভ্যতার কালসীমা হল ৩২৫০-২৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। [ii] সি. জে, গ্যাড এর মতে হরপ্পা সংস্কৃতির কালসীমা ২৩৫০-১৭৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। [iii] স্টুয়ার্ট পিগট ও মর্টিমার হুইলারের মতে হরপ্পা সংস্কৃতির কালসীমা ২৫০০-১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। [iv] ডব্লিউ. এ. ফেয়ারসার্ভিস রেডিয়াে কার্বন-পদ্ধতি অনুসরণে সিন্ধু সংস্কৃতির কালসীমা ধার্য করেছেন ২০০০-১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। [v] অলচিন দম্পতির মতে, হরপ্পা সভ্যতার কালসীমা ছিল ২১০০-১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।


[4] ব্যাপ্তি: শুধুমাত্র সিন্ধু উপত্যকা জুড়ে নয়, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, গুজরাত, রাজপুতানা, সৌরাষ্ট্র এবং নর্মদা উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল-জুড়ে হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার ঘটে। পশ্চিমে মাকরান উপকূলের সুতকাজেনদোর থেকে পূর্বে দিল্লির কাছাকাছি আলমগীরপুর এবং উত্তরে জযুর নিকটবর্তী মান্ডা থেকে দক্ষিণে গােদাবরী উপত্যকার দাইমাবাদ পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল জুড়ে (আধুনিক মত ১২ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গকিমি) হরপ্পা সভ্যতা বিস্তৃত ছিল।


[5] রক্ষণশীলতা: হরপ্পা সভ্যতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে খননকার্যের ফলে মহেনজোদারােতে সাতটি ও হরপ্পায় আটটি স্তর পাওয়া গেছে। শতসহস্র বছর ধরে এই স্তরভিত্তিক জীবনযাত্রায় রক্ষণশীল মনােভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। অধ্যাপক এ. এল ব্যাসাম বলেছেন, "রক্ষণশীলতা বা ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা এই সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য"।


[6] কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা: সিন্ধু সভ্যতার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে একই ধরনের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পরিমাপ পদ্ধতি ইত্যাদি দেখে পণ্ডিতদের অনুমান, সিন্ধু অঞ্চলে এক শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।


[7] জনগোষ্ঠী: পণ্ডিতদের ধারণায় হরপ্পা সভ্যতার জনগােষ্ঠী ছিল মিশ্র প্রকৃতির। সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত মানুষের কঙ্কাল ও করােটি পরীক্ষা করে প্রােটো-অস্ট্রালয়েড, মেডিটারেনিয়ান, মােঙ্গোলয়েড ও আল্পো-দিনারিক জনগােষ্ঠীর নমুনা মিলেছে।


[8] উন্নত নগর পরিকল্পনা: উন্নত নগর পরিকল্পনা ছিল হরপ্লা সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নগরের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে উন্নত নগর শৈলীর ছাপ মেলে। নগরের রাজপথগুলির দুদিকে ঢাকনা দেওয়া নর্দমা অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রপালীর (Sewerage) ব্যবস্থা ছিল। নগরগুলিতে শস্যাগার ও স্নানাগারের অস্তিত্ব ছিল।


আদিম আফ্রিকায় প্রাপ্ত বিভিন্ন মানব প্রজাতির নিদর্শনের ধারণা দাও। আদিম আফ্রিকার বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


আদিম আফ্রিকাবাসীর দেশান্তরের পরিচয় দাও।


আদিম আফ্রিকার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করাে।


কী কী সুবিধার জন্য প্রাচীন কালে নদীকেন্দ্রিক সভ্যতাগুলি গড়ে উঠেছিল? নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।


মেহেরগড় সভ্যতার পরিচয় দাও।


মেহেরগড়বাসীর জীবিকা কী ছিল? মেহেরগড় সভ্যতার ধ্বংসের কারণগুলি কী ছিল?


হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বিবরণ দাও।