প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস প্রথার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে এবং সেদেশে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতার পরিচয় দাও।

ক্রীতদাস প্রথার বৈশিষ্ট্য

রােমের ক্রীতদাস প্রথার কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এগুলি হল一


[1] প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে জীবনধারণ: রােমে‌ ক্রীতদাসদের জীবনে কোনাে ধরনের স্বাধীনতা ছিল না। তারা ছিল তাদের প্রভুর একান্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ক্রীতদাসদের সন্তানসন্ততিরাও জন্মসূত্রে ক্রীতদাস হত। প্রভুর কাছে। ক্রীতদাসের জীবনের মূল্য ছিল গৃহপালিত গােরুছাগলের মতােই।


[2] আইনি অধিকার থেকে বঞ্চনা: রােমের ক্রীতদাসরা‌ সমস্ত ধরনের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। কোনাে ক্রীতদাস আইনগতভাবে কোনাে সম্পত্তির মালিক বা বিবাহ করার অধিকারী হতে পারত না। তারা রােমের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে অভিষিক্ত হতে পারত না।


[3] বেগার শ্রম: প্রভু তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে গৃহে, কৃষিক্ষেত্রে, ব্যাবসায়, খামারবাড়িতে যাবতীয় কাজ এবং রাষ্ট্রের পরিশ্রমসাধ্য নির্মাণকার্যগুলি সম্পন্ন করত। এর বিনিময়ে তাদের জন্য শুধু যৎসামান্য গ্রাসাচ্ছেদন ও নামমাত্র বিশ্রামের সুযােগ থাকত।


[4] শারীরিক নির্যাতন: ক্রীতদাসের কাছ থেকে অধিক শ্রম আদায় করতে বা ক্রীতদাস পালানাের চেষ্টা করলে তাকে চাবুকের তীব্র আঘাত, উত্তপ্ত লােহার ছ্যাকা প্রভৃতি অমানুষিক দৈহিক শাস্তি দেওয়া হত।


[5] বিক্রি ও হত্যা: প্রভুর কাছে তার অধীনস্থ ক্রীতদাসদের কোনােরকম মানবিক মূল্য ছিল না। প্রভু ইচ্ছা করলেই তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে বিক্রি করতে পারত, এমনকি তাদের হত্যাও করতে পারত।


রােমে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতা


প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যে এই প্রথা সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। প্রাচীন রােমের সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সবক্ষেত্রেই ক্রীতদাস প্রথার গভীর প্রভাব ছিল।


[1] ক্রীতদাসের সংখ্যা: প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণেই ছিল। বসু রােমান নাগরিকই কিছু না-কিছু সংখ্যক ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন। জনৈক লেখকের মতে, কোনাে কোনাে ধনী ব্যক্তি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন।


[2] ক্রীতদাসদের অমানুষিক শ্রম: সমগ্র রােমান সাম্রাজ্য জুড়ে প্রভুরা তাদের অধীনস্থ ক্রীতদাসদের শ্রম শােষণ করত। ক্রীতদাসদের শ্রমেই রােমের বেশিরভাগ গৃহকাৰ্য, কৃষি উৎপাদন, প্রভুর ব্যাবসাবাণিজ্য, প্রাসাদ-রাস্তাঘাট-সেতু নির্মাণ, জলপ্রণালী নির্মাণকার্য প্রভৃতি সম্পন্ন হত।


[3] নাগরিকদের ক্রীতদাস-নির্ভরতা: ইতিহাসবিদ গ্রান্ট‌ বলেছেন যে, "স্বাধীন রােমান নাগরিকরা ক্রীতদাসদের শ্রমের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন যে, তারা নিজেদের পােশাক পরা, স্নান করতে যাওয়ার সময় পােশাক বহন করা, রান্নাবান্না প্রভৃতি অতি সাধারণ কাজগুলিও ক্রীতদাসদের সহায়তায় সম্পন্ন করতেন।


[4] রাষ্ট্রের ভূমিকা: ক্রীতদাসের মালিকের কাছ থেকে সরকার ক্রীতদাস রাখার কর হিসেবে প্রচুর অর্থ আদায় করত। সুতরাং, প্রচুর পরিমাণে কর আদায়ের উদ্দেশ্যে সরকার ক্রীতদাস প্রথাকে সমর্থন করত। এ ছাড়াও রাষ্ট্র, সেনাবাহিনীতে প্রচুর ক্রীতদাসকে সামরিক কাজে নিযুক্ত করত।


উপসংহার: প্রাচীনযুগে বিভিন্ন সভ্যতায় বা সাম্রাজ্যে ব্লীতদাস প্রথার প্রচলন থাকলেও অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় রােমান সভ্যতায় ক্রীতদাসরা অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হত। সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্রীতদাসরা মাঝেমধ্যেই বিদ্রোহের পথে পা বাড়াত।


জন লকের রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় দাও এবং রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে লকের অবদান লেখাে।


রুশাে ও মন্তেস্কুর রাষ্ট্রদর্শনের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।


পারসিক শাসনব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে স্যাট্রাপদের পরিচয় দাও এবং স্যাট্রাপির গঠনকাঠামাে উল্লেখ করাে।


চিনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার পরিচয় দাও। চিনের ম্যান্ডারিনদের কার্যাবলি ও গুরুত্বউল্লেখ করাে।


দিল্লির সুলতানি আমলে ইকাদারদের পরিচালনাধীন ইক্তা প্রথার বিবরণ দাও। ইক্তা প্রথার বিবর্তন ও ফলাফল উল্লেখ করাে।


মােগল প্রশাসনের অঙ্গ হিসেবে মনসবদারদের পরিচালনাধীন মনসবদারি ব্যবস্থার বর্ণনা দাও।


প্রাচীন বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব সম্পর্কে কী জান? প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস প্রথার পরিচয় দাও।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)