ক্রুসেডের প্রেক্ষাপটে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যেকার সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব আলােচনা করাে।

সূচনা: জেরুজালেমের দখলকে কেন্দ্র করে ক্রুসেড শুরু হলেও তা শেষপর্যন্ত খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে অলক্ষ্যে এক সম্পর্ক গড়ে দেয়। এই সম্পর্কের সুবাদে প্রতীচ্য বা পশ্চিম ইউরােপীয় এবং প্রাচ্য বা ইসলামীয় সভ্যতার বিভিন্ন দিকগুলির আদান প্রদান ঘটে। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা প্রণালী, জ্ঞান- বিজ্ঞান-সহ নানান ক্ষেত্রে একে অপরের থেকে বিভিন্ন বিষয় গ্রহণ করে। ঐতিহাসিক হিট্টি লিখেছেন, “প্রাচ্য অপেক্ষা প্রতীচ্যের জন্য ক্রুসেড ছিল অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।”


প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব

[1] ভৌগােলিক আবিষ্কার: ক্রুসেডের সুবাদে ইউরোপীয়রা‌ দীর্ঘদিন ধরে বহু সামুদ্রিক অভিযান চালায়। এর ফলে তারা এশিয়া, আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি সম্পর্কে জানতে পারে। প্রাচ্যে বাণিজ্যের নতুন পথ আবিষ্কারের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। আজিজ এস আতিয়া লিখেছেন যে, ‘কুশবহনকারীদের অভিযানমূলক উৎসাহ শেষপর্যন্ত নতুন দেশ আবিষ্কারের যুগের সূচনা ঘটায়।”


[2] বাণিজ্যিক লেনদেনের সূত্রে: প্রাচ্যের দেশগুলি থেকে প্রতীচ্যে আমদানি করা হয় বিভিন্ন বিলাস দ্রব্য, যেমন মূল্যবান পােশাক, মণিমুক্তা, এমনকি বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী। বহু নতুন নতুন নগর ও বন্দর গড়ে ওঠে। প্রাচ্যে বাণিজ্য করতে গিয়ে ইউরােপীয়রা স্বর্ণমুদ্রার প্রবর্তন করে। বাণিজ্যিক সুবিধার্থে ফ্লোরেন্স নগরের বণিকরা ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। আর, এস, লােপেজ‘দ্য কেমব্রিজ ইউরােপ ইকনমিক হিস্টোরি' গ্রন্থে লিখেছেন, “ক্রুসেড দ্বাদশ শতকে ইটালির বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিকে আন্তর্জাতিক রূপ দিয়েছিল।


[3] আধুনিক ইউরােপের বিকাশ: ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের সূত্রে আরবদের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইউরোপীয়রা পরিচিত হওয়ার সুযােগ পায়। ফলশ্রুতি হিসেবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ইউরোপে উন্নত মুসলিম সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটে। ইউরোপ অনেক বেশি আধুনিক হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক টয়েনবি লিখেছেন, “ক্রুসেডের ফলেই আধুনিক ইউরােপ জন্মলাভ করেছে।”


[4] জীবনযাত্রা প্রণালীর পরিবর্তনে: ক্রুসেডের মাধ্যমে মুসলমানদের সংস্পর্শে আসার পর তাদের সম্পর্কে ইউরােপীয়দের ঘৃণা ও অবজ্ঞার ধারণা পাল্টায়। ক্রুসেডে যােগদান করার পর ইউরােপীয়দের জীবনধারার পরিবর্তন ঘটে। এশিয়ায় আরবদের মতাে পােশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে খাদ্যতালিকা পর্যন্ত সবদিক থেকেই ইউরোপীয়রা উন্নত হওয়ার চেষ্টা শুরু করে।


[5] সাংস্কৃতিক ডাব বিনিময়ের মাধ্যমে


  • জ্ঞান-বিজ্ঞান: ক্রুসেডের ফলে প্রতীচ্য উচ্চতর জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারণা লাভ করে। বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি সম্বন্ধে আরবীয়দের মাধ্যমে ইউরােপবাসী জ্ঞান অর্জন করে। আরবীয় সংখ্যাতত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করে ইউরােপীয়রা হিসাবশাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠে।


  • সাহিত্যে: ক্রুসেডের ফলে ইসলামীয় সাহিত্যের প্রভাব ইউরােপীয়দের ওপর পড়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল আরব্য রজনির কাহিনিগুলি। সিরাপ, সুগার , লেমন, সােডা, মসলিন, সাটিন প্রভৃতি আরবি শব্দগুলির সঙ্গে ইউরােপীয়রা পরিচিত হয়। জি. এম. ট্রেভলিয়ন লিখেছেন, “ইউরােপ, এশিয়া থেকে যা নিয়ে গিয়েছিল, তা হল সুকুমার কলা ও শিল্প, বিলাসব্যসনের উপকরণ, বিজ্ঞান এবং বিবিধ বিষয়ে জানবার ও বােঝার ইচ্ছা।"


অশােকের ধম্ম-র বিভিন্ন দিকগুলি ও ধর্মপ্রচারে অশােকের বিভিন্ন উদ্যোগগুলি লেখাে।


শরিয়ত অনুযায়ী মুসলিমদের অধিকার ও কর্তব্যগুলি এবং শরিয়ত সম্পর্কে আলাউদ্দিন খলজির মনােভাব সংক্ষেপে আলােচনা করাে।


আকবরের ‘সুল-ই-কুল' ধর্মাদর্শের প্রতীক হিসেবে দীন-ই-ইলাহির পরিচয় দাও।


মােগল সম্রাট আকবরের ‘সুল-ই-কুল’ নীতি গ্রহণের কারণগুলি লেখাে।


পােপতন্ত্রের বিকাশে গ্রেগরি দ্য গ্রেট বা প্রথম গ্রেগরির এবং চার্চের বিকাশে পােপ তৃতীয় ইনােসেন্ট-এর ভূমিকা লেখো।


ক্রুসেডের কারণগুলি আলােচনা করাে।

অথবা, ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট (পটভূমি) বর্ণনা করাে।


ক্রুসেডের উদ্দেশ্যগুলি এবং ক্রুসেডের মধ্য দিয়ে কীভাবে পােপের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তা আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)