প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সূচনা: ঋগৃবৈদিক যুগের সমাজে নারীরা যে মর্যাদার অধিকারী ছিল তা পরে বিভিন্ন যুগে কমেছে। জি. এফ. ইলিন, ওয়ান্টার ব্ল্যুবেন, ডি. ডি. কোশাঙ্বী প্রমুখ মনে করেন যে, সমকালীন পরিস্থিতি ও অর্থনীতির ওপর নারীর ভাগ্য নির্ধারিত হত।


নারীর গার্হস্থ্য জীবন

[1] বৈদিক যুগ: ঋগ্‌বৈদিক যুগে গৃহস্থালির পরিচালনায় নারীর একাধিপত্য ছিল। তাকে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব। পালন করতে হত। দাসদাসীদের কাজের তদারকি করা, গৃহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, তিনবেলা গৃহদেবতার পূজা করা, গৃহ- সংলগ্ন উদ্যানের পরিচর্যা করা, সংসারের দৈনিক ও বার্ষিক ব্যয়ের হিসেব রাখা ইত্যাদি ছিল একজন আদর্শ গৃহিনীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।


[2] পরবর্তী-বৈদিক যুগ: ঋাগবৈদিক যুগে গা্স্থ্যকর্মে নারীর যেরূপ ভূমিকা ছিল তা পরবর্তী-বৈদিক যুগেও অব্যাহত ছিল। তবে এযুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়। বৌধায়ন ধর্মসূত্রে’ উল্লেখ করা হয়েছে যে, নারী বাল্যে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকবে।


[3] মৌর্যযুগ: মৌর্যযুগে নারীরা গৃহস্থালি সামলানাের পাশাপাশি নৃত্য ও সংগীতের শিক্ষাগ্রহণ করার সুযােগ পেত। গৃহে তারা বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজও করত। গৃহে অতিথির আগমন ঘটলে তার সেবা করা ছিল নারীর প্রধান কর্তব্য। গৃহলক্ষ্মীর ভূমিকা সামলানাের পাশাপাশি নারীরা স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন যজ্ঞানুষ্ঠানেও যােগ দিতে পারত।


[4] মৌর্য-পরবর্তী যুগ: মৌর্য-পরবর্তী সময়কালে নারীদের স্বামীর গৃহে মিলেমিশে থাকতে হত এবং গৃহের কাজ করতে হত। এযুগে স্ত্রীকে সংসারের প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনতে হত। স্বামী ছাড়াও শ্বশুরশাশুড়ির সেবা করা, দাসদাসীদের কাজের তদারকি করা, গৃহ পরিষ্কার রাখা তাদের অন্যতম কর্তব্য ছিল।


[5] গুপ্তযুগ: গুপ্তযুগে স্বামীর গৃহে স্ত্রীই কর্তৃত্ব করতেন৷ গুরুজনদের সেবা, স্বামীর বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়ন, ভৃত্যদের পরিচালনা, গৃহ পরিষ্কার, গবাদি পশুর দেখাশােনা, প্রাত্যহিক খরচের হিসাব রাখা, সুতাে কাটা, কাপড় বােনা প্রভৃতি এযুগের নারীদের দৈনন্দিন কাজ বলে বাৎসায়ন উল্লেখ করেছেন।


[6] গুপ্ত-পরবর্তী যুগ: গুপ্ত-পরবর্তী যুগেও সমাজে নারীর গার্স্থ্যকর্ম মােটামুটি একই রকম ছিল। তবে এই সময় থেকে শাম্ত্রকারদের নানা বিধিনিষেধের ফলে নারীরা আরও বেশি করে গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। ফলে বাইরের জগত থেকে বহু দূরে অবস্থান করে গৃহকর্ম সম্পাদন, সন্তান পালন, পরিবারের সেবা, গৃহদেবতার পূজা প্রভৃতির মাধ্যমেই নারীকে জীবন কাটাতে হত।


উপসংহার: প্রাচীন ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী গৃহস্থ্যের কর্তব্যপালনের ক্ষেত্রে সর্বদাই পুরুষের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ড. সুকুমারী ভট্টাচার্য লিখেছেন, “খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে একাদশ শতকের ভারতবর্ষ ছিল হিন্দু ভারতবর্ষ, যেখানে শূদ্র ও নারী ছিল একেবারে নীচুতলার বাসিন্দা।


বৈদিক যুগের জাতি হিসেবে নিষাদ ও ব্রাত্য জাতির পরিচয় দাও।


বর্ণপ্রথার বৈশিষ্ট্য কী? 'বর্ণ' ও ‘জাতি'-র ধারণার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করাে।


'পতিত ক্ষত্রিয়' বা 'ব্রাত্য ক্ষত্রিয়' কাদের বলা হয়? ভারতীয় সমাজজীবনের সঙ্গে যবন, শক ও হুন জাতির মিলন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্য ও রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।