ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্বের সহায়ক উপাদানগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করাে। গুপ্তযুগে অগ্রহার ব্যবস্থা সামন্ততন্ত্রের বিকাশে কতখানি সহায়তা করেছিল?

সামন্ততন্ত্রের সহায়ক উপাদান

প্রাচীন ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে গিয়ে ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ড. রামশরণ শর্মা, ড. ডি. ডি. কোশাম্বী, ড. দ্বিজেন্দ্রনাথ ঝা, অধ্যাপক বি. এন. এস. যাদব, এস. গােপাল ভকতপ্রসাদ মজুমদার প্রমুখ পণ্ডিতগণ সামন্ততন্ত্রের বিভিন্ন সহায়ক উপাদান বা তথ্যের উল্লেখ করেন। এই উপাদানগুলি হল- [1] ভারতীয় সমাজে দাসপ্রথার অস্তিত্ব। [2] অগ্রহার প্রথার দ্বারা ভূমিদানের ফলে নতুন ভূম্যাধিকারী শ্রেণির উত্থান ঘটা। [3] কৃষিভিত্তিক স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটা। [4] কৃষকদের জমির সঙ্গে কঠোর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়া। [S] মুদ্রার সংখ্যা কমে গিয়ে মুদ্রা-অর্থনীতি সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। [6] দেশে শিল্প ও বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছিল। [7] প্রাচীন নগরগুলিতে অবক্ষয় শুরু হয়েছিল।


সামন্ততন্ত্রের বিকাশে অগ্রহার ব্যবস্থার সহায়তা


সামন্ততন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করার জন্য অগ্রহার ব্যবস্থাকে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অগ্রদূত' বলা হয়। এই ব্যবস্থার অন্তর্গত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সামন্ততন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করেছিল—


[1] ব্যক্তি মালিকানার প্রসার: ড. রামশরণ শর্মার মতে, গুপ্তযুগে জমির ওপর রাজকীয় ও গােষ্ঠীমালিকানা সংকুচিত হয়ে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার ঘটতে থাকে। এর অন্যতম কারণ। ছিল 'অগ্রহার ব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মস্থানে ও ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্যে ভূমিদান। রাজা ধর্মস্থানে এবং ব্রাহ্মণদের যে ভূমি দান করতেন। তাতে রাজার আর কোনাে অধিকার থাকত না।


[2] ভূমিদান: গুপ্ত রাজা ও ধনী ব্যক্তিরা পুণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ধর্মস্থান ও ব্রাহ্মণদের (পরবর্তীকালে যােদ্ধাদের) যে নিষ্কর ভূমি দান করতেন তার যাবতীয় অধিকার দানগ্রহীতার হাতে চলে যেত। দান-গ্রহীতা এই দানপ্রাপ্ত জমির সমগ্র রাজস্ব আদায়, ওই ভূখন্ডে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, বিচারকার্য পরিচালনা করা প্রভৃতির সার্বিক দায়িত্ব পালনের অধিকার চলে যেত দানগ্রহীতার হাতে। দানপ্রাপ্ত ভূমির নীচে অবস্থিত খনিজ সম্পদেও দানপ্রাপকের সম্পূর্ণ অধিকার জন্মাত।


[3] ক্রিস্তর ব্যবস্থা: সমকালীন স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতেও উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ভূমিদানের ফলে ভূমি ব্যবস্থায় তিনটি স্তরের সৃষ্টি হয়েছিল। এগুলি হল- [i] মহিপতি বা রাজা, [ii] ভূস্বামী বা জমির প্রাপক ও [iii] কৰ্ষক বা শােষিত কৃষকশ্রেণি। অর্থাৎ ভূমিদানের ফলে সামন্ততন্ত্রের উপাদান হিসেবে সর্বোচ্চ শিখরে রাজা, মধ্যবর্তী স্তরে বিভিন্ন ভূস্বামী ও নিম্নস্তরে শােষিত কৃষ শ্রেণি অবস্থান করত। এ থেকে প্রাচীন ভারতে সামন্ততন্ত্রের বিকাশের ধারাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


উপসংহার: ড. দীনেশচন্দ্র সরকার, ড. রণবীর চক্রবর্তী প্রমুখ অগ্রহার ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতে রাজার ক্ষমতা হ্রাস এবং সামন্ততন্ত্রের বিকাশের যুক্তি খণ্ডন করেছেন। ড. সরকার মনে করেন যে, গুপ্তযুগের 'অগ্রহার' ব্যবস্থা রাজার ক্ষমতা হ্রাস বা মুদ্রা- অর্থনীতির অবক্ষয়ের কোনো প্রমাণ দেয় না।


মধ্যযুগের ইউরােপে সার্ফ বা ভূমিদাসদের অবস্থা কেমন ছিল? তারা কীভাবে মুক্তিলাভ করত?


সামন্ততন্ত্রের যুগে ইউরােপে কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করাে।


ইউরােগে সামন্ততন্ত্রের গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি উল্লেখ করাে। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল?


ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় বা পতনের কারণগুলি কী ছিল?


প্রাচীন ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্কটি কী?


সামন্ততন্ত্র' বলতে কী বােঝ? ভারতের সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।


গুপ্তযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্তপ্রথার উত্থানের পটভূমি আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)