বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা কী ছিল?

বরনির ফতােয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি


[1] রাজতন্ত্র

  • রাজতন্ত্রের রূপ: রাজতন্ত্র: বরনি তাঁর ফতােয়া-ই-জাহন্দারি গ্রন্থে চরম রাজতন্ত্রকে সমর্থন করেছেন। তিনি রাজতন্ত্রকে একটি বংশানুক্রমিক প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করেছেন এবং রাজাকে সবধরনের বন্ধন থেকে মুক্ত চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী বলে ঘােষণা করেছেন। তিনি ভারতের সুলতানি রাজতন্ত্রকে পারস্যের সাসানীয় রাজতন্ত্রের অনুকরণে গড়ে তােলার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, পারস্যের সম্রাট ইসলামের আদর্শ ভাবধারা রক্ষা করে চলেছে, পারস্যের রাজতন্ত্রের জাকজমক, বিলাস-বৈভব ও মর্যাদা সমগ্র ইসলামি জগতে শ্রদ্ধা লাভ করেছে।


  • কাউন্সিল গঠন: বরনির মতে, প্রশাসনিক কাজে সাহায্যের জন্য সুলতান এক পরিষদ (কাউন্সিল) গঠন ও তার সংস্কার করবেন। এই কাউন্সিল অর্থাৎ মজলিস-ই-খাস এমন ভাবে গঠন করতে হবে, যাতে রাজার পরিবর্তন ঘটলেও কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত নীতিগুলির কোনাে পরিবর্তন হবে না।


  • আইনের সংরক্ষণ: বরনির মতে, ইসলামিক রাজ্যগুলিতে কোরান অনুযায়ী শরিয়ত আইনই শেষ কথা। ইসলাম ধর্মমত অনুসারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বারাষ্ট্রীয় জীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক হল—শরিয়তি আইন। রাজা যেহেতু ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং খলিফার হয়ে শাসন সম্পাদন করেন, তাই শরিয়তি আইন ঠিকমতাে প্রযুক্ত হচ্ছে কিনা তা দেখা রাজার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।


[2] রাষ্ট্রনীতি

  • ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: প্লেটো ও অ্যারিস্টট্লের রাষ্ট্রনৈতিক ভাবনায় প্রভাবিত বরনি মনে করতেন রাজার প্রধান কর্তব্য হল—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে তিনি ন্যায়বিচার বলতে সত্য, ন্যায়, ধর্ম ইত্যাদির প্রতিষ্ঠা করাকে বুঝিয়েছেন। বরনি বলেছেন—ইসলাম ও শরিয়তের নিয়মকানুন কঠোরভাবে রাজাকে পালন করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে আগত যাবতীয় বাধা রাজাকে অপসারিত করতে হবে। যাবতীয় অন্যায় ও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে রাজা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।


  • ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠা: মুসলিম রাজার এক প্রধান কর্তব্য হল ইসলামের সুরক্ষাদান ও তার প্রচার ও প্রসার ঘটানাে। রাজাদের স্মরণ রাখতে হবে যে তারা কেবলমাত্র খলিফা (ঈশ্বরের প্রতিনিধি)-দের অসমাপ্ত কাজগুলি সম্পাদন করেন। তাঁর শাসন যেহেতু ইসলাম অনুমােদিত, তাই নিষ্ঠা-সহ তিনি ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধানগুলি অনুসরণ করবেন।


  • প্রজাসাধারণের কল্যাণসাধন: বরনির মতে, ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রজাদের কল্যাণসাধনে রাজাকে ব্রতী হতে হবে। প্রজাকল্যাণে ব্যর্থ হলে রাজা প্রজাদের আনুগত্য হারাবেন। রাজা পথিকদের জন্য রাজপথ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ-সহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজ করবেন। রাজা অমুসলিমদের নিরাপত্তা স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার দেবেন।


মােগল সাম্রাজ্য এবং অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে রাজার প্রধান ও অন্যান্য কর্তব্য সম্বন্ধে যে সমস্ত পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।


অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য বর্ণিত রাষ্ট্রতত্ত্ব বা 'সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব' আলােচনা করাে।


অর্থশাস্ত্রের সংজ্ঞা দাও। অর্থশাস্ত্রের বিষয়বস্তু ও প্রকৃতি (Nature) লেখাে।


কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত মণ্ডলতত্ত্বের (প্রকৃতি-মণ্ডল বা রাজমণ্ডল), সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। চিত্রসহ মণ্ডলতত্ত্বের গুরুত্ব লেখাে।


কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা কী ছিল?


মধ্যযুগে দিল্লির সুলতানি শাসনের প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় কাঠামাে বর্ণনা করাে। জিয়াউদ্দিন বরনি তার 'ফতোয়া-ই-জাহান্দারি' গ্রন্থে সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে কী মত প্রকাশ করেছেন?