প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত? প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব উল্লেখ করাে।

প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাসদের কাজ

প্রাচীন মিশরে নাগরিকদের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করতে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য এবং সাধারণ কাজকর্মে নিযুক্ত করা হত।


[1] গৃহভৃত্যের কাজ: মিশরের অধিকাংশ ক্রীতদাস গৃহভৃত্য হিসেবে গৃহের রান্নাবান্না, গৃহ পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করে তাদের প্রভুর পারিবারিক জীবনে অধিক বিলাসিতা নিয়ে আসত।


[2] শ্রমিকের কাজ: মিশরের অনেক ক্রীতদাসকে বিভিন্ন খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হত। বহু ক্রীতদাসকে নুবিয়া ও সিনাই-এর বিপদসংকুল সােনার ও তামার খনির কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল।


[3] অভিজাতদের সম্পত্তি তদারকির কাজ: বসু ক্লীতদাস ফ্যারাও, অভিজাত ও পুরােহিতদের স্থাবর সম্পত্তিতে মজুরের কাজে নিযুক্ত হত ও তার তদারকি করত।


[4] সেনাবাহিনীতে কাজ: সৈনিক হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে কোনাে কোনাে যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাসকে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করা হত।


[5] করণিকের কাজ: কোনাে কোনাে ক্রীতদাস তার প্রভুর ব্যাবসা বা অন্যান্য কাজে হিসাবরক্ষক বা করণিক হিসেবে কাজ করত।


[6] বিনোদন শিল্পীর কাজ: ক্রীতদাসদের মধ্যে অনেকে নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী প্রভৃতি হিসেবেও কাজ করত।


[7] বিশেষ সুবিধাজনক কাজ: তবে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে বিশেষ সুবিধাজনক ছিল অভিজাত ও ধনী পরিবারের কাজে নিযুক্ত থাকা। অভিজাতদের পারিবারিক কাজে নিযুক্ত ক্রীতদাসদের সন্তানরা বিশেষ মেধা ও যােগ্যতার পরিচয় দিয়ে প্রভুর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে পারত। সেক্ষেত্রে তার পক্ষে উচ্চ সরকারি পদলাভ, দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভের পর পূর্বতন প্রভুর পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপন প্রভৃতিও সম্ভব হত।


প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব


মিশরীয় অর্থনীতির কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ক্রীতদাসদের ভূমিকা যথেষ্ট ছিল।


[1] শ্রমিকের ভূমিকায়: বিভিন্ন খনি থেকে ক্রীতদাসদের দ্বারা উৎপাদিত মূল্যবান ধাতু দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে। ক্রীতদাসদের অমানুষিক পরিশ্রম ছাড়া প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে এই খনিজ উৎপাদন কখনােই সম্ভব হত না।


[2] প্রযুক্তির উন্নতিতে: খনি থেকে প্রাপ্ত ধাতু দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির সামগ্রী তৈরি হত। প্রযুক্তির এই উন্নতির ফলে শিল্পদ্রব্যের উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।


[3] কৃষিকাজে: ক্রীতদাসরা মিশরের উর্বর জমিতে প্রচুর ফসল ফলাত এবং নদী থেকে মাছ ধরত। উদ্বৃত্ত অংশ বৈদেশিক বাজারে রপ্তানি করে যথেষ্ট মুনাফা আসত।


[4] মজুরের কাজে: নীলনদের নুড়ি-পাথর পরিষ্কার করে নদীকে নৌ-চলাচলের উপযােগী করে তুলেছিল ক্রীতদাসরা ফলে সেই সময় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে সুবিধা হয়।


[5] কুটিরশিল্পে: ক্রীতদাসদের মধ্যে পুরুষরা শপের চাষ করত এবং মহিলারা সুতাে কাটা ও বস্ত্র বোনার কাজে নিযুক্ত থাকত। এ ছাড়া ক্রীতদাসরা অন্যান্য কুটিরশিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিল।


উপসংহার: প্রাচীন মিশরের ব্লীতদাসরা তাদের প্রভুর পরিবারের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করে প্রভুর পারিবারিক জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসত। পাশাপাশি ক্রীতদাসদের শ্রমে মিশরে কৃষি উৎপাদনে যেমন গতি এসেছিল তেমনি গতি এসেছিল শিল্পক্ষেত্রেও। ফলে প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছিল।


রােমের ক্রীতদাসরা পালানাের চেষ্টা করত কেন? রােমের ক্রীতদাসরা কীভাবে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারত?


রােমে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি কী ছিল? প্রাচীন রােমান অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব উল্লেখ করাে।


রােমের ক্রীতদাস বিদ্রোহগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। বিদ্রোহের পটভূমিতে রােমান ক্রীতদাসরা কী কী অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছিল?


প্রাচীন মিশরীয় জনসমাজের শ্রেণিবিন্যাস করাে। এই সমাজে প্রচলিত ক্রীতদাস প্রথা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব সম্পর্কিত বিতর্কটি উল্লেখ করাে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় ক্রীতদাসদের জীবন কতটা দুর্বিষহ ছিল?


প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত? প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল?


প্রাচীন মিশরের কৃষক ও ক্রীতদাসের অবস্থার তুলনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)