রােমান ও গুপ্ত শিল্পকলার বিষয়ে একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।

রােমান ও গুপ্ত শিল্পকলার পার্থক্য / তুলনা

প্রাচীন রােমান এবং গুপ্ত উভয় সাম্রাজ্যেই শিল্পকলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে উভয় সাম্রাজ্যে এই অগ্রগতি লক্ষ করা গিয়েছিল। নীচে উভয় সাম্রাজ্যের শিল্পকলার মধ্যে একটি তুলনামূলক আলােচনা করা হল一


রােমান শিল্পকলা


  • প্রাচীন ইট্রাঙ্ক্যান শিল্পের (৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ধারা থেকে রােমান শিল্পের উদ্ভব ঘটেছে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া রােমানরা দীর্ঘদিন গ্রিস, মিশর, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ শাসন করেছিল। তাই রােমান শিল্পকলায় সেইসব দেশের শিল্পরীতির যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল।


  • আনুমানিক ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যের পতনের কাল (৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রােমান শিল্পের চরম অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।


  • রােমানরা খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে কংক্রিটের স্থাপত্যকৌশল উদ্ভাবন করলে স্থাপত্যকর্মের প্রভূত উন্নতি ঘটে। রােমানরাই প্রথম স্থাপত্য পাথরের ব্যবহার শুরু করেছিল।


  • রােমান স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শনগুলি হল বিভিন্ন অট্টালিকা ও প্রাসাদ। রােমের বৃহদায়তন প্রাসাদগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল প্যান্থিয়ন। এ ছাড়া ৮০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় চার তলাবিশিষ্ট বিশালায়তন অ্যাফিথিয়েটার বা কলােসিয়াম। এখানে ৫০,००० দর্শক একত্রে বসে রথের দৌড়, গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ প্রভৃতি দেখতে পারত। রােমান স্থাপত্যের অপর উল্লেখযােগ্য নিদর্শন ছিল ফোরাম।


  • রােমান শিল্পে ব্যক্তির প্রতিকৃতি ছিল বিশেষ জনপ্রিয়। রােমান শিল্পে বিভিন্ন মূর্তি ও প্রতিকৃতি নির্মিত হত। পূর্ণাবয়ব মূর্তি ছাড়াও সম্রাটদের আবক্ষ মূর্তি নির্মিত হত। বিখ্যাত ব্যক্তির ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাতে শিল্প- স্থাপত্যকে ব্যবহার করা হত। তা ছাড়া বিভিন্ন স্থাপত্যের দেয়ালে নানান কারুকার্যময় অলংকরণ করা হত।


  • আর্কিসিলােয়াস, বােথােস, স্টেটফানােস, জিনােড্রাউস প্রমুখ ছিলেন রােমান যুগের সুবিখ্যাত ভাস্কর। তাঁরা বিভিন্ন সম্রাট ও দেবদেবীর মূর্তি নির্মাণ করেন।


  • নারী-পুরষ, শিশু ও নিসর্গের দৃশ্য অঙ্কনে রােমান চিত্রকররা দক্ষ ছিলেন। কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী থেকে আঁকার তুলি তৈরি হত। রং তৈরি করা হত বিভিন্ন পাথুরে শিলা ও গাছপালা থেকে লাল, হলুদ, সাদা, কালাে প্রভৃতি রঙের বহুল ব্যবহার ছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার ডেমিট্রিয়াস এবং টিমােম্যাচোস ছিলেন বিখ্যাত রােমান চিত্রকর।


  • রােমান শিল্পের উপরােক্ত ধারাগুলি ছাড়াও ধাতু শিল্প, খােদাই শিল্প, হাতির দাঁতের শিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতিরও বিকাশ ঘটেছিল।


  • আজ প্রায় দু'হাজার বছর পর রােমান সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব না থাকলেও সেই রােম নগরী আজও আছে। সেই সঙ্গে সেযুগের বিভিন্ন নির্মাণকার্য এবং শিল্পকলার নিদর্শনও এখনও টিকে আছে।


গুপ্ত শিল্পকলা


  • সম্পূর্ণ ভারতীয় শিল্পরীতিতে এ যুগের শিল্পের বিকাশ ঘটে। আর. ডি. ব্যানার্জীর মতে, গুপ্তযুগে ভারতীয় শিল্পকলা দীর্ঘকালের পরাধীনতা মুক্ত হয়ে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে আত্মপ্রকাশ করেছিল। মন্দিরনির্মাণ শিল্পে দ্রাবিড় ও নাগর শিল্পরীতির প্রভাব পড়েছিল।


  • আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গুপ্ত শিল্পকলার পথ চলা শুরু হয়। তবে খ্রিস্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে এই শিল্পকলার চূড়ান্ত অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।


  • গুপ্তযুগে ইট, কাঠ, পাথর প্রভৃতি দিয়ে স্থায়ী মন্দির নির্মাণের প্রচলন ঘটে। এসময় পাথর কেটে বিভিন্ন বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। মন্দিরের মাঝখানে গর্ভগৃহ এবং চারপাশে প্রাঙ্গণ থাকত।


  • এই যুগের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি স্থাপত্য-নিদর্শন হল মণিনাগের মন্দির, কোটেশ্বর মন্দির, তিগােয়ার বিষ্নমন্দির, ভূমারের শিবমন্দির, কুবীরের পার্বতীমন্দির, দেওগড়ের দশাবতার মন্দির, কানপুরের ভিতরগাঁওয়ের মন্দির, অজন্তা ও ইলােরা এবং ভূপালের নিকটবর্তী উদয়গিরির গুহামন্দির, সাঁচী ও বুদ্ধগয়ার স্তুপ ইত্যাদি।


  • ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক শিল্পের বা গান্ধার শিল্পের প্রভাবমুক্ত হয়ে গুপ্তযুগে নতুন শিল্পরীতি গড়ে ওঠে। এ যুগে ভাস্কর্যের বিষয়বস্তু ছিল পৌরাণিক দেবদেবী যেমন রাম, কৃয়, বিয়ু প্রভৃতি। ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল সারনাথের বুদ্ধমূর্তিগুলি। অমরাবতী ও মথুরার ভাস্কর্যের সৌন্দর্য এ যুগে পরিণত রূপ লাভ করেছিল।


  • সারনাথের অবলােকিতেশ্বর মূর্তি, সাঁচির বােধিসত্ত্ব, মথুরার ব্রোঞ্জের দণ্ডায়মান বুদ্ধমূর্তি, দেওঘরের দশাবতার মন্দিরে অনন্তশয্যায় শায়িত বিষুর মূর্তি প্রভৃতি গুপ্তযুগের ভাস্কর্যের উল্লেখযােগ্য নিদর্শন।


  • গুপ্ত যুগে অজন্তা ও ইলােরার গুহার দেওয়ালে অঙ্কিত চিত্রকলাগুলি এযুগের দর্শকদেরও বিস্মিত করে। রাজকীয় জীবন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, নগর, অরণ্য, ঋষি, ভূতপ্রেত সবই এখানকার চিত্রের বিষয়বস্তু। এ ছাড়া বাঘ গুহাচিত্রের নিদর্শনগুলিও অপূর্ব। "মাতা ও পুত্র', 'বােধিসত্ব চক্লপাণি', 'হরিপ চতুষ্টয়' প্রভৃতি চিত্রগুলিতে বাস্তব জীবনের কাহিনি ফুটে উঠেছে।


  • গুপ্তযুগে ধাতুশিল্প, অলংকার শিল্প, কাঠের শিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতির অগ্রগতি ঘটেছিল। এযুগে ধাতুশিল্পের অগ্রগতি ছিল এককথায় বিস্ময়কর।


  • গুপ্তযুগের শিল্পকলা রােমান শিল্পকলার প্রায় সমসাময়িক হলেও গুপ্তযুগের অধিকাংশ শিল্প-নিদর্শন কালের স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। একমাত্র কিছু গুহায় এখনও গুপ্তযুগের শিল্পকলার কিছু অস্তিত্ব রয়ে গিয়েছে।


সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দাও। প্রাচীন কালে গড়ে-ওঠা বিশ্বের কিছু উল্লেখযােগ্য সাম্রাজ্যের উদাহরণ দাও।


সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।


সাম্রাজ্যের উত্থান থেকে পতন পর্যন্ত মৌর্য ও ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক অগ্রগতির তুলনামূলক আলােচনা করাে।


মৌর্য ও ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের সংস্কৃতির তুলনামূলক আলোচনা করো।


মৌর্য ও ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের মধ্যবর্তী সময়ের একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


রােমান ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তারনীতির পার্থক্য / তুলনামূলক আলােচনা করাে।