প্রাচীন মিশর দেশটির পরিচয় দাও। মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় কেন?

প্রাচীন মিশর দেশের পরিচয়

[1] ভৌগােলিক অবস্থান: আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে সাহারা মরুভূমির কোলে মিশর দেশটি অবস্থিত। মিশরের উত্তরে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে নুবিয়ার মরুভূমি, পূর্বে লােহিত সাগর এবং পশ্চিমে লিবিয়ার মরুভূমি।


[2] নামকরণ: হােমার এর মহাকাব্যদ্বয় ইলিয়াড ও ওডিসিতে ইথিওপিয়ার উল্লেখ মেলে। হামার নীলনদ ও এই নদের জলবিধৌত দেশ বােঝাতে ইজিপ্ট শব্দ ব্যবহার করেন। প্রাচীন লেখক ডিওডােরাস মনে করেন মিশরে বসবাসকারী ইথিওপীয়দের নাম থেকে মিশরীয় নামের উৎপত্তি। নেভিল-এর মতে, মিশরীয়দের বন্যার দেবতা অ্যাজেব থেকে ইজিপ্ট নাম এসেছে।


[3] আদিম মিশরীয় জাতিগোষ্ঠী: প্রাচীন মিশরীয়রা চারটি গােষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল-


  • টেমেহু (লিবীয়): এদের গায়ের রং ছিল ফরসা এবং এরা ছিল নীল চোখবিশিষ্ট।

  • আমু : এদের বসবাস ছিল মিশরের পূর্ব মরুভূমি অঞ্চলে। এদের গায়ের রং ছিল বাদামি। এরা ছিল মূলত যাযাবর সম্প্রদায়ের।

  • নেহেসু: প্রাচীন মিশরীয় ধারণায় এরা ছিল সূর্যদেবতা রা (Ra) বা রে (Re)-এর সন্তান।

  • টেমহু: প্রাচীন মিশরীয় ধারণায় এরা সূর্যদেবতা রা বা রে- র অণু থেকে সৃষ্টি হয়।


মিশরকে নীলনদের দান বলার কারণ


ইতিহাসের জনক গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাস সর্বপ্রথম তাঁর ইতিবৃত্ত' গ্রন্থে মিশরকে নীলনদের দান বলে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য ঐতিহাসিক গবেষকও হেরােডােটাসের এই মতকে সমর্থন করেছেন।


[1] উপত্যকা গঠনের দরুন: আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে নীলনদ অনেক বেশি চওড়া ও গভীর ছিল। সেসময় বদ্বীপ অঞ্চলগুলিতে পলি, বালি, কাকর জমে সমতল উপত্যকা গঠিত হয়েছিল। এই উপত্যকা অঞ্চলগুলিতে বসতি নির্মাণ শুরু হলে সভ্যতার উন্মেষের প্রেক্ষাপট রচিত হয়। ঐতিহাসিক বি. জি. ট্রিগার- এর মতে—সেই সময়ে মিশরের জনবসতিগুলি বন্যাবিধৌত অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল।


[2] কৃষিজ উৎপাদনের কারণে: প্রতি বছর বর্ষার সময় নীলনদে বন্যা হত। বন্যার সময় নদীর দুই তীরে নদীবাহিত পলিমাটি সঞ্চিত হত। এর ফলে নদীর উভয় তার কৃষিজ ফসল উৎপাদনের অনুকূল হয়ে ওঠে। সেসময়ে মিশরে গম, যব, ভুট্টা, তিসি, বিভিন্ন শাকসবজি উৎপাদিত হত। তাই বলা যায় মিশরকে শস্যশ্যামলা, সুজলা-সুফলারূপে গড়ে তােলার ক্ষেত্রে নীলনদের অবদান ছিল।


[3] পশুপালনের সুবিধা: মিশরে নীলনদের উভয় তীরে পলিমাটি যুক্ত অঞ্চলে তৃণভূমি গড়ে ওঠে।এই সুবিস্তৃত তৃণভূমিতে পশুখাদ্যের জোগান ও পশুপালনের সুবিধা মেলে। ছাগল, ভেড়া, শূকর ও গােরু ছিল সেসময়ের প্রধান গৃহপালিত পশু। তাই বলা যায় নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চলে জীবিকা হিসেবে পশুপালনের সুবিধা থাকায় সভ্যতার বিকাশ ঘটে।


[4] পরিবহণের সুবিধা: প্রাচীন মিশরে জলপথই ছিল পরিবহণের মূল মাধ্যম। নীলনদ যেহেতু সেসময় সমস্ত বদ্বীপ অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাই মিশরের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে নীলনদ ধরে যােগাযােগের সুবিধা মিলেছিল।


[5] বহির্জনগােষ্ঠীর বসবাসের সুবাদে: এশিয়া থেকে সিমাইটগপ, আদিম ইউরােপীয় জনগােষ্ঠীভুক্ত লিবীয়গণ এবং আফ্রিকার উম্ন অঞ্চল থেকে আগত নুবীয়গণ নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে এসে বসবাস শুরু করে। বিভিন্ন বহিঃসম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ একত্রে বসবাস করার সুবাদে এখানে নতুন এক সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।


মেহেরগড়বাসীর জীবিকা কী ছিল? মেহেরগড় সভ্যতার ধ্বংসের কারণগুলি কী ছিল?


হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বিবরণ দাও।


প্রবন্ধ লেখাে : হরপ্পা সভ্যতা


হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের সামাজিক জীবনের পরিচয় দাও।হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের সামাজিক জীবনের পরিচয় দাও।


হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় দাও।


হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীদের ধর্মীয় জীবনের পরিচয় দাও।


হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণগুলি আলােচনা করাে। হরপ্পা সভ্যতার নগরজীবনের ওপর একটি টীকা লেখাে।