প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল? প্রাচীন ভারতীয় দাস কীভাবে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারত?

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে ক্রীতদাস প্রথার বিরােধিতা

প্রাচীন ভারতীয় সমাজে যে অমানবিক ক্রীতদাস প্রথা বা দাসপ্রথা ছিল ও দাসদের যেভাবে বাণিজ্য-পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হত, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। তবে এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য হল কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র। ইতিহাসবিদ ড. এ. এল. বাসাম মনে। করেন যে, “অর্থশাস্ত্রে দাসদের প্রতি যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হয়েছে তা এক বিরল দৃষ্টান্ত৷” প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র, শাস্ত্রকারদের রচনা ও টীকাভাষ্য এবং অন্যান্য গ্রন্থে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে মনােভাব ব্যক্ত হয়েছে।


[1] দাসপ্রথায় নিষেধাজ্ঞা ও দাসদের মুক্তিকে সমর্থন: বৈদিক ও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে দাসপ্রথার বিপক্ষে মনােভাব ব্যক্ত করা হয়েছে। বৈদিক সাহিত্যে দাসব্যাবসা এবং ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের দ্বারা দাসদের নিয়ােগ গর্হিত কর্ম বলে ঘােষণা করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মেও দাসদের মুক্তির পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।


[2] দাসপ্রথার নিন্দা: কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে দাস। ব্যবস্থাকে নিন্দা করে একে স্নেচ্ছদের বিষয় বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং দাসদের প্রতি সদয় ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। অর্থশাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে যে, "দাসপ্রথাকে সংকুচিত করতে হবে এবং কোনাে আর্যকে দাসে পরিণত করা চলবে না।" দাস-কন্যার সতীত্ব রক্ষার কথাও এখানে বলা হয়েছে।


[3] দাস বিক্রির নিষেধাজ্ঞা: ‘অর্থশাস্ত্রে’ দাস হিসেবে শিশুসন্তান বিক্রির ঘটনাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, কেউ নিজেকে দাস হিসেবে বিক্রি করলে সেই ক্রীতদাসের সন্তানরা উত্তরাধিকারসূত্রে এই ফল ভােগ না করে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে।


[4] সম্পত্তির উত্তরাধিকার স্বীকার: দাসদের উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ করা, ভােগ দখল করা ও সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকারকে ‘অর্থশাস্ত্রে’ স্বীকার করা হয়েছে।


[5] নবজাতকের স্বাধীনতার অধিকারকে স্বীকার: কোনাে দাসের সঙ্গে কোনাে স্বাধীন ব্যক্তির মিলনে জন্ম নেওয়া সন্তান ‘অর্থশাস্ত্রে স্বাধীন নাগরিক বলে ঘােষিত হয়েছে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে দাসরা কখনােই আজীবন দাসত্ব করতে বাধ্য ছিল না। তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রধান কয়েকটি উপায়ও ছিল一


[1] প্রভুর জীবন রক্ষা: কোনাে দাস যদি কোনাে বিপদে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তার প্রভুর জীবন রক্ষা করত তবে প্রভু সেই দাসকে সাধারণত মুক্তি দিত।


[2] ঋণের অর্থ পরিশােধ: ঋণের দায়ে দাসত্ব গ্রহণে বাধ্য কোনাে ব্যক্তি যদি ঋণের অর্থ মিটিয়ে দিত, তাহলে সে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারত।


[3] মুক্তিমূল্য প্রদান: যারা নিজেদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত বা যুদ্ধবন্দি হিসেবে দাস হত তারাও মুক্তিমূল্য দিয়ে স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার অধিকারী ছিল।


উপসংহার: প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথা তেমন প্রবলভাবে ছিল না, যেমন ছিল প্রাচীন গ্রিসে ও রােমে। ভারতীয় দাসদের নিয়ে আলােচনা তাই অনেকটাই তাত্ত্বিক আলোচনা। কেননা, প্রাচীন গ্রিস বা রােমের ব্লীতদাস প্রথার ব্যাপকতার সঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় দাসপ্রথার তুলনা করা চলে না।


প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত? প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল?


প্রাচীন মিশরের কৃষক ও ক্রীতদাসের অবস্থার তুলনা করাে।


প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত? প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব উল্লেখ করাে।


রােমান ক্রীতদাসদের কোন্ কোন্ অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হত এবং জন্মসূত্রে কারা ক্রীতদাসে পরিণত হত? প্রাচীন রােমান ও প্রাচীন মিশরীয় ক্রীতদাস প্রথার মধ্যে কয়েকটি প্রধান পার্থক্য উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাস (বা দাস) প্রথার অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্কটি উল্লেখ করাে। ঐতিহাসিকদের মতানুযায়ী প্রাচীন ভারতীয় দাসরা কী কী কাজ বা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল?


প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন যুগে প্রচলিত দাস (ক্রীতদাস) প্রথার পরিচয় দাও। মৌর্যযুগে ভারতে দাসপ্রথার কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতীয় ক্রীতদাসরা কী ধরনের অধিকার ও সহানুভূতি পাওয়ার অধিকারী ছিল? প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিতে দাসপ্রথার কতটা ভূমিকা ছিল?