কী কী সুবিধার জন্য প্রাচীন কালে নদীকেন্দ্রিক সভ্যতাগুলি গড়ে উঠেছিল? নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।

নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণ

আদিম যুগে নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন সুপ্রাচীন সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। সুপ্রাচীন সুমেরীয়, মিশরীয়, পিকিং, সিন্ধু প্রভৃতি সভ্যতা বিভিন্ন নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল।


[1] বসবাসের সুবিধা: নদীতীরবর্তী সমভূমি অঞ্চল বসবাসের পক্ষে ও গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে আদর্শ হওয়ায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে জনবসতি। কৃষিজ ফসল রক্ষার জন্য মানুষ নদীতীরেই প্রথম ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে।


[2] কৃষিকাজের সুবিধা: নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলি প্রতি বছর বন্যায় পলিমাটিতে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে, যা কৃষিকাজের পক্ষে খুবই উপযােগী। এ ছাড়া অঞ্চলগুলিতে খাল কেটে নদী থেকে জল এনে সারাবছর জলসেচ করা যেত। এভাবে চাষবাস উন্নত হওয়ায় এবং নানাবিধ ফসল উৎপাদনের সুবিধা থাকায় নদীর তীরে মানুষ সভ্যতা গড়ে তােলে।


  • পশুপালনের সুবিধা: নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে প্রচুর ঘাস জন্মায় যা তৃণভােজী পশুদের প্রধান খাদ্য। সহজেই এই পশুখাদ্য পাওয়ার সুবিধা থাকায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলে মানুষ বসবাস শুরু করে।


  • ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধা: নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ নদীপথে ব্যাবসাবাণিজ্য চালাত। নৌকা ছিল সেসময়ের প্রধান পরিবহণ মাধ্যম। তাই দেশের মধ্যে বা বাইরে জলপথ ধরে ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধা থাকায় নদীতীরে বসতি গড়ে ওঠে।


[3] যােগাযােগের সুবিধা: প্রাচীন কালে মানুষ নদীপথের মাধ্যমেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করত। নদীপথে যেহেতু সহজে ও খুব তাড়াতাড়ি যাতায়াত করা যায় তাই অনেকেই নদীর ধারে বসবাস করতে শুরু করল।


[4] পানীয় জল ও খাদ্যের সুবিধা: প্রাচীন কালের মানুষ পানীয় জলরূপে নদীর জলকেই ব্যবহার করত। নদী ছিল পানীয় জলের অফুরন্ত ভাণ্ডার। এই সুবিধার জন্য প্রাচীন মানুষ নদীতীরে জনবসতি গড়ে তুলেছিল।


নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার বৈশিষ্ট্য


[1] কৃষির প্রসার: নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। নদীতীরবর্তী অঞ্চলে খাল কেটে অনুবর জমিতে জলসেচের সাহায্যে তারা ফসল ফলাতে শুরু করে।


[2] পশু শক্তির যথাযথ ব্যবহার: এসময় মানুষ পশুকে কৃষিকাজ ও পরিবহণের কাজে আরও ভালােভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। নদীকেন্দ্রিক সভ্যতায় গৃহপালিত পশুর মধ্যে অন্যতম ছিল কুকুর, ছাগল, গােরু, ভেড়া, শূকর প্রভৃতি।


[3] শিল্পের প্রসার: খাদ্যের জোগান নিশ্চিত থাকায় নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার অনেকেই শিল্পকর্মের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করত। এ যুগের শিল্পের মধ্যে অন্যতম ছিল—ধাতুশিল্প, বয়নশিল্প, মৃৎশিল্প, অলংকার নির্মাণ শিল্প, গৃহনির্মাণ শিল্প ইত্যাদি।


[4] বাণিজ্যের প্রসার: নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বাণিজ্য। প্রধানত নদীপথে বাণিজ্য চলত। স্থলপথেও কিছু কিছু বাণিজ্য হত। বিনিময়প্রথার মাধ্যমেই মূলত বাণিজ্যিক লেনদেন চলত। নদীকেন্দ্রিক সভ্যতাগুলির সমাজে বণিক শ্রেণির প্রাধান্য ছিল।


[5] ধর্মবিশ্বাস : নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার মানুষ বস্তু দেবদেবীর প্রতি বিশ্বাস রাখত। এইসব সভ্যতায় পুরােহিতদের ক্ষমতা ও মর্যাদা ছিল সমাজে অন্যান্য শ্রেণির তুলনায় বেশি। অধিবাসীরা প্রাকৃতিক শক্তি, উদ্ভিদ, বিভিন্ন পশুপাখির পূজা করত। এ ছাড়াও তারা পরলােকে বিশ্বাস করত।


[6] লিপির ব্যবহার: নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার অপর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল লিপির ব্যবহার। সুমেরের কিউনিফর্ম লিপি, মিশরের হায়ারােগ্লিফিক লিপি থেকে নদীমাতৃক সভ্যতাগুলির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারা যায়।


প্রাচীন প্রস্তর ও নব্য প্রস্তর উভয় যুগের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর পার্থক্যগুলি উল্লেখ করাে। উভয় যুগের হাতিয়ারের পার্থক্যগুলি লেখাে।


তাম্র-প্রস্তর যুগ (Chalcolithic Age)-এর সংস্কৃতির পরিচয় দাও।


কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়?


আদিম আফ্রিকার সংস্কৃতি কীরূপ ছিল? এই সময়কালের আফ্রিকার পরিবর্তিত আবহাওয়ার ওপর আলােকপাত করাে।


আদিম আফ্রিকায় প্রাপ্ত বিভিন্ন মানব প্রজাতির নিদর্শনের ধারণা দাও। আদিম আফ্রিকার বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


আদিম আফ্রিকাবাসীর দেশান্তরের পরিচয় দাও।


আদিম আফ্রিকার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করাে।