গুপ্তযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্তপ্রথার উত্থানের পটভূমি আলােচনা করাে।

সূচনা: প্রাচীন ভারতে বিশেষত গুপ্তযুগে সামন্ততন্ত্রের উত্থান ঘটেছিল। বিশেষ কিছু ব্যবস্থা বা ঘটনা সামন্ততন্ত্রের উত্থানকে সহজ করেছিল।


গুপ্তযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্তপ্রথার উত্থানের পটভূমি

[1] কৃষকের বন্ধ জীবন: গুপ্তযুগে, বিশেষ করে আদি মধ্যযুগে ভারতের কৃষকসমাজ ভূমির মালিকানা হারিয়ে প্রভুর জমিতে শ্রমদানে বাধ্য হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন| ড. যাদব দেখিয়েছেন যে, আদি-মধ্যযুগে ‘হালকর’, ‘বদ্ধহল” প্রভৃতি শব্দগুলি কৃষকের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এর থেকে তিনি অনুমান করেন যে, সে যুগে কৃষকরা নিজস্ব অধিকার হারিয়ে প্রভুর জমিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।


[2] বাণিজ্যের অবনতি: সামন্ততন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কৃষি-অর্থনীতির ওপর বেশি নির্ভরতা এবং বাণিজ্যের অবনতি।ড. রামশরণ শর্মা ও ড. যাদব দেখিয়েছেন যে, গুপ্তযুগে অগ্রহার ব্যবস্থার বিকাশের ফলে স্বনির্ভর গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিই মুখ্য হয়ে ওঠে। রােমান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গে রােমের সক্রিয় বাণিজ্যিক সম্পর্কও শেষ হয়ে যায়। ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


[3] নগরের অবক্ষয়: অগ্রহার প্রথাকে ভিত্তি করে গুপ্তযুগে উদ্ভূত নতুন ভূস্বামীরা কৃষি উৎপাদনে শ্রমের ওপর জোর দিলে শিল্প ও বাণিজ্য অবহেলিত হয়। ফলে নগরগুলির অবক্ষয় শুরু হয়। এসময় প্রাচীন নগরজীবনের অবক্ষয় এবং গ্রামজীবনের প্রসার সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


[4] সম্রাট ও কৃষকের মধ্যবর্তী শাসকগোষ্ঠী: ড. কোশাস্বীর মতে, খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের মধ্যে ভারতে সম্রাট তার অধীনস্থ বিভিন্ন স্থানীয় শাসকদের নিজেদের এলাকায় রাজস্ব আদায়, শাসন পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে কিছু কিছু অধিকার দেন। উধ্ধ্বতন সম্রাট কর্তৃক স্থানীয় শাসকদের এরূপ অধিকারদানকে ড. কোশাম্বী ওপর থেকে সামন্ততন্ত্র" (Feudalism from Above) বলে অভিহিত করেছেন। ড. কোশাম্বীর মতে, খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতক নাগাদ সম্রাট ও কৃষকের মধ্যবর্তী স্তরে নতুন ভূম্যধিকারী গােষ্ঠীর উত্থান ঘটে যারা কৃষকদের ওপর বলপ্রয়ােগ করে কৃষি উৎপাদনকে সচল রাখত। ড. কোশাম্বী একে 'নীচু থেকে সামন্ততন্ত্র' (Feudalism from Below) বলে অভিহিত করেছেন।


গুপ্তযুগে সামন্ততন্ত্রের উত্থানে অগ্রহার প্রথার ভূমিকা


ভারতে গুপ্তযুগে সম্রাট এবং বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি পুণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্রাহ্মণদের নিষর জমি দান করতেন| দানগ্রহীতা স্বয়ং প্রাপ্ত জমি বা গ্রামের রাজস্ব আদায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসন ও বিচারকার্য পরিচালনা প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ের অধিকারী হতেন। এটি 'অগ্রহার বা ব্ৰহ্মদেয় প্রথা নামে পরিচিত। এই প্রথার দ্বারা জমির যাবতীয় অধিকার চলে যেত দানগ্রহীতা অর্থাৎ জমির প্রাপকের হাতে। জমির প্রাপক এই দানপ্রাপ্ত জমির যাবতীয় রাজস্ব আদায় ও ভোগ করতেন। এই জমিতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, বিচারকার্য পরিচালনা প্রভৃতি অধিকারও জমির প্রাপকের হাতে চলে যেত। দান-প্রাপ্ত ভূমির ওপর অবস্থিত যাবতীয় সম্পদ, এমনকি ভূমির নীচে অবস্থিত খনিজ সম্পদেও জমির প্রাপকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হত। এভাবে ভূমিদান ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে স্থানীয় বিভিন্ন ভূস্বামীর আবির্ভাব ঘটে যা সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি রচনা করে।


ম্যানরের দুর্গের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব উল্লেখ করাে। ম্যানরের দুর্গের জীবন কেমন ছিল?


মধ্যযুগের ইউরােপে সার্ফ বা ভূমিদাসদের অবস্থা কেমন ছিল? তারা কীভাবে মুক্তিলাভ করত?


সামন্ততন্ত্রের যুগে ইউরােপে কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করাে।


ইউরােগে সামন্ততন্ত্রের গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি উল্লেখ করাে। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল?


ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় বা পতনের কারণগুলি কী ছিল?


প্রাচীন ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্কটি কী?


সামন্ততন্ত্র' বলতে কী বােঝ? ভারতের সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)