আদিম আফ্রিকাবাসীর দেশান্তরের পরিচয় দাও।

আদিম আফ্রিকার জনগােষ্ঠীর পরিযান

আদিম মানবের আদি বাসভূমি ছিল আফ্রিকায়। এক সময় এই অদিবাসভূমি ত্যাগ করে, তারা দূরদূরান্তে অজানা ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।


[1] পরিযানের লক্ষ্য


  • অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধান: প্লেইস্টোসিন পর্বের একটি বড়াে সময়কাল ধরে পর্যায়ক্রমে তুষার যুগ বিরাজ করে। এই প্রতিকূল আবহাওয়া আদিম আফ্রিকাতেও বিরাজমান ছিল। এই আদিম আফ্রিকাবাসীর অনেকেই অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানে অন্যত্র যাত্রা করে।


  • খাদ্যের সংস্থান : প্লেইস্টোসিন পর্বে তুষার যুগ বিরাজমান থাকায় গাছপালা বরফে ঢাকা পড়ে যায়। পাশাপাশি প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রচুর প্রাণী মারা যায়। ফলে খাদ্য সংগ্রহ ও শিকার করা বেশ কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আফ্রিকার আদিম মানবগােষ্ঠী তাই খাদ্যের সংস্থানের লক্ষ্যে অভিবাসিত হয়।


[2] পরিযান পথ: আফ্রিকার আদিম মানব মূলত দুটি পথ ধরে আফ্রিকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে।


  • স্থলপথ ধরে: আদিম আফ্রিকাবাসী তাদের পরিযানের প্রথম পর্বে আফ্রিকার সমুদ্রপােকূলবর্তী স্থলভাগ ধরে ইউরােপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা প্রভৃতি মহাদেশে প্রবেশ করে।


  • বরফরূপী সমুদ্রপৃষ্ঠ ধরে: তুষার যুগে সমুদ্রে জলরাশি ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয়েছিল। আবার স্থলভাগের বিস্তীর্ণ অংশও বরফের চাদরে ঢাকা পড়েছিল। এইভাবে জল ও স্থলভাগ বরফের চাদরে ঢেকে যাওয়ায় সাগর দ্বারা বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলির মধ্যে সংযােগ গড়ে ওঠে। এই সংযােগ পথ ধরে অর্থাৎ বরফরূপী সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে আদিম আফ্রিকার অধিবাসীরা অভিবাসিত হয়।


[3] দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিযান


  • প্রথম বহির্গমন: ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান সম্ভবত হােমাে ইরেক্টাস প্রজাতির মানব গােষ্ঠী সর্বপ্রথম আফ্রিকা ছেড়ে অন্যত্র সরে যায়। এদের বহির্গমন আফ্রিকা থেকে প্রথম বহির্গমন নামে পরিচিত। এদের উত্তরসূরিরাই চিন, জাভা-সহ, এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।


  • দ্বিতীয় বহির্গমন: প্রত্নতত্ত্ববিদদের অনুমান যে পরবর্তী পর্যায়ে পূর্ব আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে হােমাে স্যাপিয়েন্সদের একটা বড়াে অংশ অভিবাসিত হত। তুষার যুগের শেষ পর্বের এই অভিবাসন 'আফ্রিকা থেকে দ্বিতীয় বহির্গমন' নামে পরিচিত।


[4] পরিযানের অভিমুখ


  • ইউরােপে: আফ্রিকার সঙ্গে ইউরোপ মহাদেশের প্রধান সংযােগস্থল ছিল আরব ভূখণ্ড, আধুনিক গবেষণাধর্মী অভিমত হল আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষ আরবের দক্ষিণ প্রান্তের পথ ধরে ইউরােপের দিকে এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে তারা উত্তরদিকের মিশরীয় পথকে পরিহার করে।


  • এশিয়ায়: আদিম আফ্রিকার অধিবাসীরা দুটি মূল ধারায় ভাগ হয়ে এশিয়া মহাদেশে পৌঁছায়। প্রথম ধারাটি আফ্রিকা থেকে ইউরােপ হয়ে স্থলপথ ধরে এশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এই পরিযান পর্বে প্রথমে পশ্চিম এশিয়া এবং পরে চিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যবদ্বীপ (জাভা)-সহ নানা স্থানে তারা যাত্রা শুরু করে। আর দ্বিতীয় ধারাটি আরব হয়ে ইউরেশিয়ার পথ ধরে ভারতে প্রবেশ করে।


  • উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়: আদিম আফ্রিকাবাসী বেরিং প্রণালী ধরে এশিয়া হয়ে উত্তর আমেরিকার দিকে পাড়ি দেয়। সেখান থেকে তারা আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যায়। শেষে তারা দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে দক্ষিপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছােয়।


  • অস্ট্রেলিয়ায়: তুষার যুগে আদিম আফ্রিকাবাসীর মধ্যে অনেকেই এশিয়া থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পোঁছােয়।


উপসংহার: আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষের পৃথিবীব্যাপী পরিযান এক বৈচিত্র্যমণ্ডিত ও বিস্ময়কর ঘটনা। পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসমস্ত আদিম জাতিগােষ্ঠীগুলির পরিচয় মেলে তাদের অনেকেই আদিম আফ্রিকাবাসীর উত্তরসূরি ছিল বলা চলে।


নব্য প্রস্তর বা নতুন পাথরের যুগের মানবজীবনের নানা দিকগুলি উল্লেখ করাে।


নব্য প্রস্তর যুগের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল? এ যুগের চাষবাস সম্পর্কে লেখাে।


প্রাচীন প্রস্তর ও নব্য প্রস্তর উভয় যুগের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর পার্থক্যগুলি উল্লেখ করাে। উভয় যুগের হাতিয়ারের পার্থক্যগুলি লেখাে।


তাম্র-প্রস্তর যুগ (Chalcolithic Age)-এর সংস্কৃতির পরিচয় দাও।


কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়?


আদিম আফ্রিকার সংস্কৃতি কীরূপ ছিল? এই সময়কালের আফ্রিকার পরিবর্তিত আবহাওয়ার ওপর আলােকপাত করাে।


আদিম আফ্রিকায় প্রাপ্ত বিভিন্ন মানব প্রজাতির নিদর্শনের ধারণা দাও। আদিম আফ্রিকার বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)