মধ্যযুগের ইউরােপে 'শিভালরি বা বীরত্বের আদর্শ এবং 'নাইট' বা বীর যােদ্ধাদের সম্পর্কে কী জান?

মধ্যযুগের 'শিভালরি' বা বীরত্বের আদর্শ সম্পর্কীয় ধারণা

মধ্যযুগে ইউরােপের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় বীরত্বের এক মহান আদর্শ গড়ে উঠেছিল যা 'শিভালরি' নামে পরিচিত। ফরাসি শব্দ শিভেলিয়ার থেকে 'শিভালরি কথাটি এসেছে, যার অর্থ হল ‘অশ্বারােহী।


[1] আচরণবিধি: ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততা, যুদ্ধযাত্রা, ধর্মরক্ষা, দুর্বলকে রক্ষা, ভদ্রতা, নারীর প্রতি সম্মান প্রভৃতি ছিল শিভালরির প্রধান আচরণবিধি মধ্যযুগের নাইটদের এই আচরণবিধি মেনে চলতে হত।


[2] যুদ্ধে অংশগ্রহণ: মধ্যযুগে সামন্ত প্রভু ও অভিজাতদের প্রধান কাজ ছিল তাদের প্রভুর প্রয়ােজনে যুদ্ধকার্যে নিযুক্ত হওয়া। এজন্য অভিজাত পরিবারের সন্তানদের বাল্যকাল থেকেই যুদ্ধবিদ্যা ও বিভিন্ন আদর্শ শিক্ষাদান করা হত।


[3] শিক্ষলাভ: অভিজাত পিতা তাঁর পুত্রকে মাত্র সাত বছর বয়সেই আত্মীয়, বন্ধু বা প্রভুর আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিতেন। সেখানে সে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি ভদ্রতা, সদাচরণ, শিকার, ধর্মনীতি, আজ্ঞা পালন প্রভৃতি সম্পর্কে শিক্ষালাভ করত। চোদ্দো বছর বয়সে সে কোনাে যোদ্ধার কাছ থেকে যুদ্ধবিদ্যার পাঠ নেওয়ার সময় অশ্বারােহণ, অস্ত্রচালনা, ঢাল বহন প্রভৃতি শিখত।


[4] নাইট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ: যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষার পর একুশ বছর বয়সে অভিজাত যুবকটি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্নান করে সারারাত দুর্গের গির্জায় প্রার্থনা করত। প্রভুর কাছে দীক্ষালাভ করে সে 'নাইট' বা বীর যােদ্ধা হিসেবে গণ্য হত।


[5] নিরক্ষরতার অভিশাপ: শিভালরির আদর্শে লেখাপড়া শেখার কোনাে ব্যবস্থা না থাকায় নাইটরা অনেকেই সম্পূর্ণ নিরক্ষর হত।


নাইটদের জীবনযাত্রা


অভিজাত পরিবারের বালকরা সাত বছর থেকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে একুশ বছর বয়সে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাইট' বলে গণ্য হত।


[1] আচরণবিধি পালন: ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততা, যুদ্ধযাত্রা, ধর্মরক্ষা, দুর্বলকে রক্ষা, ভদ্রতা, নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রভৃতি আচরণবিধিগুলি নাইটদের মেনে চলতে হত।


[2] অশ্বারােহী সেনা: বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সামন্তপ্রভুরা নাইটদের নিয়ে এক শক্তিশালী অশ্বারেহী বাহিনী গড়ে তুলেছিল। এই বাহিনীর নাইটরা তীব্র গতিতে ঘােড়া ছুটিয়ে শঙ্কুকে পর্যুদস্ত করত এবং শত্রুর আক্রমণ থেকে স্থানীয় মানুষকে রক্ষা করত।


[3] অবসর বিনােদন: 'টুর্নামেন্ট' নামে কৃত্রিম যুদ্ধ, শিকার প্রভৃতির মাধ্যমে নাইটরা অবসর বিনােদন করত। প্রতিদ্বন্দ্বীর বর্শা ভেঙে বা তাকে ঘােড়া থেকে ফেলে দিয়ে একজন নাইট বিজয়ীর পুরস্কার লাভ করত।


[4] অবক্ষয়: নাইটরা শিভালরির যে আদর্শ পালনে দায়বদ্ধ ছিল তার পরিবর্তে পরবর্তীকালে লুণ্ঠন, নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার প্রভৃতি অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে তাদের বীরত্বের আদর্শ ভূলুষ্ঠিত হয়।


[5] গুরুত্ব: মধ্যযুগে নাইটরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল—[i] তারা বহিরাক্রমণে বিপর্যস্ত ইউরােপে শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে এসেছিল। [ii] তারা ধর্মযুদ্ধে (কুসেড) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। [iii] নারী, শিশু বৃদ্ধ ও অসহায়দের সেবায় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তারা মহান আদর্শের ছাপ রেখেছিল। [iv] ধর্মরক্ষায় তারা গুরুদায়িত্ব পালন করেছিল।


উপসংহার: মধ্যযুগের শিভালরির আদর্শ ও নাইটদের কেন্দ্র করে ইউরোপে নতুন ধরনের সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল। নাইটদের বীরত্বের কাহিনি নিয়ে রচিত চারণকবিদের গানের মধ্যে দিয়েই লিরিক বা গীতিকবিতার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।


ধ্রুপদি যুগের সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিতর্কটি কী? মধ্যযুগের ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের কয়টি ও কী কী যুগ লক্ষ করা যায়?


মধ্যযুগে ইউরােপে সামন্তপ্রভুদের প্রধান ক্ষমতা ও কার্যাবলি উল্লেখ করাে।


পশ্চিম ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের কারণগুলি উল্লেখ করাে।


ইউরােপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।


ইউরােপের সামন্ততান্ত্রিক কাঠামােয় স্তরবিন্যাস কেমন ছিল?


সামন্তপ্রভু ও তার অধস্তন সামন্তের মধ্যে কী কী অধিকার ও কর্তব্যের অদিনিপ্রদান ঘটত? সামন্ত তান্ত্রিক ব্যবস্থায় অধস্তন সামন্ত কোন্ কোন্ বিষয়ে তার প্রভুর প্রতি আনুগত্য দেখাতেন?


ফিফ’ ও 'ইনভেস্টিচার বলতে কী বােঝায়? মধ্যযুগের ইউরােপে সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা কেমন ছিল?