কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে রাজার প্রধান ও অন্যান্য কর্তব্য সম্বন্ধে যে সমস্ত পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজার প্রধান কর্তব্যসমূহ

[1] প্রজাম্বার্থ রক্ষা ও প্রজাকল্যাণ: কৌটিল্য বলেছেন,‌ রাজার কর্তব্য হল প্রজাস্বার্থ রক্ষা করা এবং প্রজাকল্যাপে নিয়ােজিত থাকা প্রজাদের মঙ্গল, সমৃদ্ধি ও সুখ প্রদানের ক্ষেত্রে রাজাকে সক্রিয় থাকতে হবে। অর্থশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে- "প্রজাসুখে সুখ্যং রাজঃ, প্রজানাঞ্চ হিতে হিতম" (অর্থশাস্ত্র, ।, ১৯)। অর্থাৎ প্রজাদের সুখেই রাজার সুখ, প্রজাদের হিত বা মঙ্গলেই রাজার হিত বা মঙ্গল হয়।


[2] সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষা: অর্থশাস্ত্র মতে রাষ্ট্র আসলে সমাজেরই অংশ। সমাজের মধ্যে থেকেই রাষ্ট্রের জন্ম। এই বিচারে রাজার কর্তব্য হল রাষ্ট্রকে রক্ষার মধ্যে দিয়ে সমাজকে রক্ষা করা। প্রয়ােজনে রাজা রাষ্ট্রনীতিজ্ঞ (Statesman) বা গুপ্তচর নিয়ােগ করে রাজ্যের সমস্ত খবর নেবেন।


[3] দুর্দশা থেকে মুক্ত করা: পিতা যেমন পুত্রকে রক্ষা করেন, রাজাও তেমন প্রজাদের যাবতীয় দুর্দশা থেকে মুক্ত করবেন। বন্যা, মহামারি, খরা, অগ্নিকাণ্ডের মতাে প্রাকৃতিক বা আকস্মিক বিপর্যয়ের সময়ও প্রজাদের পাশে দাঁড়ানাে রাজার কর্তব্য। দুর্ভিক্ষের সময় দুঃস্থদের সাহায্যের জন্য রাজা রাজকীয় শস্যভাণ্ডার খুলে দেবেন।


[4] দারিদ্র দূরীকরণ: কৌটিল্যের ধারণায় দরিদ্ররা সাধারণত লােভী ও বেপরােয়া হয়ে ওঠে। অভাবের তাড়নায় তারা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করতে পারে|তাই রাজার উচিত হল দরিদ্রদের সাহায্য দান করে ধনী-দরিদ্রের মধ্যেকার ব্যবধান মােচনের চেষ্টা করা।


[5] দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন: রাজার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করা। অপরাধীকে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী রাজা যেমন শাস্তি দেবেন, তেমন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ নাগরিককে রাজা পুরস্কৃত করবেন, সম্মানীয় ব্যক্তিদের সম্মান ও মর্যাদা দেবেন।


কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজার অন্যান্য কর্তব্য


[1] সুদৃঢ় সেনাবাহিনী গঠন: কৌটিল্যের মতে, সামরিক শক্তির ওপরই রাজ্যের অস্তিত্ব বা স্থায়িত্ব অনেকাংশে নির্ভরশীল। রাজা এমন এক সেনাবাহিনী গঠন করবেন, যারা রাজ্যের সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবেন। সেনাধ্যক্ষদের সঙ্গে পরামর্শ করেই রাজা যুদ্ধের যাবতীয় পরিকল্পনা নেবেন।


[2] ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: রাজা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাগরিকদের রক্ষা করবেন। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে রাজা নিজ সন্তান বা শত্রুর মধ্যে কোনাে প্রভেদ করবেন না।রাজা চারবর্ণের প্রজাদের প্রতিই সমান ব্যবহার করবেন। আইনের চোখে এদের সকলকেই সমানভাবে দেখবেন। ন্যায়বিচার মেনেই তিনি অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করবেন।


[3] যােগ্যদের নিয়ােগ: প্রশাসনের বিভিন্ন পদগুলিতে রাজা দক্ষ ও যােগ্য কর্মচারীদেরই নিয়ােগ করবেন। এমনকি সামরিক বাহিনীর প্রধান বা যুদ্ধের সেনানায়কদেরও রাজা নির্বাচন করবেন। রাজা প্রদেষ্ট' নামে প্রধান ফৌজদারি বিচারক এবং ‘ব্যাবহারিক’ নামে প্রধান দেওয়ানি বিচারকদেরও নিয়ােগ করবেন।


[4] ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নয়ন: বাণিজ্য পথকে সুরক্ষিত করা‌ এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি ও সম্প্রসারণ রাজার আশু কর্তব্য। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য বজায় রাখার জন্য রাজাকে সচেষ্ট থাকতে হবে।


[5] সুসম্পর্ক স্থাপন: প্রজাসাধারণ ও প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে রাজাকে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। রাজাকে দেখতে হবে প্রজারা যেন নির্ভয়ে তার কাছে গিয়ে সহজেই তাদের অভাব-অভিযােগগুলি জানাতে পারে। রাজার ভদ্র ও পরিমার্জিত আচরণে জনগণ যেন সন্তুষ্ট থাকেন।


সীমাবদ্ধতা: প্রথমত, কৌটিল্য রাজাকে স্বাধীন বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে কিন্তু রাজারা স্বাধীন ছিলেন না। নৈতিক এবং আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে রাজার ক্ষমতা সীমিত ছিল। দ্বিতীয়ত, 'সভা এবং 'সমিতি রাজার কর্তব্য ও অধিকারকে অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করত। তৃতীয়ত, রাজাকে অনেকসময় পূর্ব প্রচলিত প্রথা ও স্থানীয় আইনের কাছে নতিস্বীকার করতে হত। চতুর্থত, প্রজাসাধারণের অসন্তোষ বা প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে রাজাকে যে-কোনো কাজ করতে হত।


রােমান ও গুপ্ত শিল্পকলার বিষয়ে একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


প্রাচীন রােমান ও প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যে সামাজিক বৈষম্য ও দাসপ্রথার তুলনামূলক আলােচনা করাে।


রােমান সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিষয়ে একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


মােগল সম্রাট আকবর এবং অটোমান সম্রাট সুলেমানের কৃতিত্বের তুলনামূলক আলোচনা করাে।


মােগল ও অটোমান সাম্রাজ্যের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, চিত্রকলা, সংগীত, ভাষার বিকাশ এবং সাহিত্য বিষয়ের একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


ভারতের মােগল সাম্রাজ্য এবং তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


মােগল সাম্রাজ্য এবং অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।