ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রভাব বা ফলাফল লেখাে।

সূচনা: ষােড়শ শতকে জার্মানি থেকে ধর্মসংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন-সহ ইউরােপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই দেশগুলিতে প্রােটেস্ট্যান্ট ধর্মমত সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র সম্পর্কিত নীতি, আর্থিক কার্যকলাপ, মানবিক চেতনা, নীতিবােধ, নন্দনতত্ত্, ধর্মীয় ভাবনা—এই সমস্ত কিছুই ধর্মসংস্কারের অভিঘাতে বদলাতে শুরু করে।


ধর্মসংস্কার আন্দোলনে প্রভাব বা ফলাফল

[1] খ্রিস্টান জগতের বিভাজন: ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে পশ্চিম ইউরােপের খ্রিস্টান জগৎ দুটি পরস্পরবিরােধী শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। একদিকে থাকে পােপপন্থী রােমান ক্যাথলিক ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন প্রভৃতি দেশ। অপরদিকে থাকে পােপবিরােধী প্রােটেস্ট্যান্ট-পন্থী জার্মানি, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও উত্তর ইউরোপের নানান দেশ।


[2] ধর্ম ও রাজনীতির পৃথকীকরণ: ধর্মসংস্কারের প্রভাবে ইউরােপের বেশ কয়েকটি দেশে চার্চের ওপর রাষ্ট্রের জয় সূচিত হয়। ধর্মনীতি ও রাজনীতির মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানা হয়। ধর্মীয় প্রধানদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হয়।


[3] জাতীয় চেতনার প্রসার: প্রােটেস্ট্যান্টদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সুফল হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় চেতনার প্রসার ঘটতে শুরু করে। এক দেশে এক ভাষা, এক ঐতিহ্য, এক সংস্কৃতি—এই আদর্শের উদ্ভব ঘটে। এর পাশাপাশি ইউরােপ জুড়ে পােপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাষ্ট্রীয় চার্চ গড়ে উঠতে শুরু করে।


[4] ধর্মীয় উদারতার প্রসার: ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে যাবতীয় অন্ধত্ব ও কুসংস্কারের জাল ছিন্ন হতে থাকে। সাধারণ মানুষ অনুভব করতে শুরু করে যে ধর্মসাধনায় কেবলমাত্র একটি মত ও পথ চূড়ান্ত বা শেষ কথা হতে পারে না। পশ্চিম ইউরােপের কমবেশি সমস্ত দেশেই গড়ে ওঠে ধর্মীয় সহনশীলতা ও উদারতার পরিবেশ।


[6] ব্যক্তিস্বাধীনতা ও যুক্তিবাদীদের বিকাশ: ধর্মসংস্কার আন্দোলন সাধারণ মানুষের জীবনকে চার্চের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করায় ব্যক্তিস্বাধীনতার বিকাশ ঘটে। অষ্টাদশ শতকে যে যুক্তিবাদী যুগের সূচনা হয়, তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ধর্মসংস্কার আন্দোলন।


[6] প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের উদ্ভব: ধর্মসংস্কার আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল হিসেবে ক্যাথলিকধর্মের মধ্যেও সংস্কার প্রচেষ্টা দেখা দেয়, যা ইতিহাসে প্রতি ধর্মসংস্কার আন্দোলন নামে পরিচিত। প্রােটেস্ট্যান্টদের অগ্রগতি প্রতিরােধ করতে এবং রােমের চার্চগুলির মহিমাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য এই আন্দোলন শুরু হয়।


[7] পুঁজির উদ্ভব: ক্যাথলিকধর্মে ঋণদান বা সুদ গ্রহণ করা ছিল পাপ। ধর্মসংস্কার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসব ক্ষেত্রে বিরােধিতা না করায় পশ্চিম ইউরােপে পুঁজির উদ্ভব ও বিকাশ শুরু হয়। ফলে ধনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে আর তেমন কোনাে বাধা থাকল না।


[8] ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা: চার্চ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রতিযােগিতায় চার্চতন্ত্র ক্রমশ পিছু হটতে থাকে। প্রােটেস্ট্যান্ট দেশগুলিতে চার্চের ওপর রাষ্ট্রের জয় সূচিত হয়। এ ছাড়াও এই দেশগুলিতে রাজারাই চার্চের প্রধান হয়ে ওঠেন।


উপসংহার: ধর্মসংস্কার আন্দোলন মধ্যযুগের ধর্মীয় আন্দোলন-গুলির অবসান ঘটিয়েছিল।ইতিপূর্বে শুরু হওয়া পাপ সপ্তম গ্রেগরির সংস্কার, মঠজীবনবাদ, ফ্রায়ারদের উত্থান, ললার্ডদের অভ্যুত্থান প্রভৃতি ধর্মীয় আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে।


বৌদ্ধধর্মে হীনযানবাদ ও মহাযানবাদের মধ্যে পার্থক্য লেখাে। বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়ের কারণ কী?


জৈন ধর্মমত সম্পর্কে আলােচনা করাে।


বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের মধ্যেকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করাে।


ইউরােপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণ, পটভূমি বা প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করাে।


ইউরােপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


ইউরােপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলােচনা করাে।


প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিবরণ দাও।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)