মধ্যযুগে ইউরােপে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করাে।

সূচনা: রােমান সাম্রাজ্যের পতনের (৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ) পরবর্তীকালে ইউরােপে ব্যাবসাবাণিজ্যের অবনতি হয়। কিন্তু মধ্যযুগে ইউরােপে ব্যাবসাবাণিজ্য আবার প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এই সময় ইউরোপে বাণিজ্যের বিকাশের বিভিন্ন কারণ ছিল।


মধ্যযুগে ইউরােপের বাণিজ্যের বিকাশের কারণ

[1] ক্রুসেডের ভূমিকা: ক্রুসেডের ফলেই ইউরোপের সঙ্গে প্রাচ্যের যােগাযােগ গড়ে ওঠে এবং ইউরোপে প্রাচ্যের বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পাশ্চাত্য (ইউরোপ) ও প্রাচ্যের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়।


[2] প্যালেস্টাইন দখলের ফল: ধর্মযােদ্ধাদের দ্বারা প্যালেস্টাইন দখলের ফলে পশ্চিমের বণিকদের কাছে প্যালেস্টাইনের সম্পদশালী শহর ও বন্দরগুলির দরজা খুলে যায়। আমালফি, ভেনিস, জেনােয়া, পিসা প্রভৃতি শহরগুলি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়ে ওঠে।


[3] নগরের বিকাশ: একাদশ থেকে চতুর্দশ শতকের মধ্যে ইউরােপে বিভিন্ন নতুন নগরের প্রতিষ্ঠা হয় এবং পুরােনাে নগরগুলির পুনরুত্থান ঘটে। বণিকদের বাসস্থান এবং পণ্য চলাচলের কেন্দ্র হিসেবে নেপলস, র্যাভেনা, পিসা প্রভৃতি পুরানাে বাণিজ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি ভেনিস, অমালফি, মিলান, পেভিয়া প্রভৃতি নতুন নগরগুলিও বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। জনসংখ্যা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি নগর ও বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষভাবে সহায়তা করে।


[4] লােম্বার্ডদের আক্রমণ: বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ভূমধ্যসাগরের বিস্তীর্গ অঞ্চলে বারংবার লােম্বার্ডদের আক্রমণের ফলে সেখানকার কৃষিকার্য দীর্ঘকাল ধরে ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যাহত হতে থাকে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ কুটিরশিল্প ও বাণিজ্যকে বিকল্প জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে।


[5] গিল্ডের প্রতিষ্ঠা: ইউরােপে বণিক ও কারিগরদের পৃথক পৃথক গিল্ডের প্রতিষ্ঠা বাণিজ্যের অগ্রগতিতে সহায়তা করে। গিল্ড তার সদস্যদের কারখানায় কাঁচামাল ও শ্রমিকের জোগান অব্যাহত রেখে বাণিজ্য পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করত।


[6] বাণিজ্যপথের উন্নতি: মধ্যযুগের মধ্যপর্বে ইউরোপের রাস্তাঘাট ও নদীপথগুলির উন্নতি হলে দূরদূরান্তে বাণিজ্যের পণ্য চলাচলে সুবিধা হয়। তা ছাড়া পথে রাজকীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং বণিকদের নিজস্ব রক্ষীবাহিনী পণ্য চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সক্ষম হয়।


[7] কম্পাসের আবিষ্কার: দ্বাদশ শতকে দিকনির্পায়ক কম্পাস আবিষ্কারের ফলে নৌবাণিজ্যের প্রভূত অগ্রগতি ঘটে। নাবিকরা কম্পাসের পাশাপাশি অক্ষাংশ নির্ণয়ের যন্ত্র ও উন্নত মানচিত্র ও সহায়তায় নতুন নতুন বাণিজ্যপথ আবিষ্কার করে এবং দূরদূরান্তে নির্ভয়ে পণ্য নিয়ে পাড়ি দেওয়ার সাহস পায়।


[8] মুসলিমদের প্রয়াস: আরব দুনিয়ার মুসলিম ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লােভে ইটালির বিভিন্ন বাণিজ্যকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তােলে। তাদের উদ্যোগে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্য পণ্যের আদানপ্রদান বৃদ্ধি পায়।


[9] জনসংখ্যা বৃদ্ধি: মধ্যযুগে ইউরােপে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেশ কিছু ভূমিদাসদের মুক্তি প্রভৃতির ফলে বাণিজ্যের কাজে সস্তায় শ্রমিক নিয়ােগ করা সম্ভব হয়।


উপসংহার: ইউরােপের সামন্ততান্ত্রিক যুগে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের ফলে সেখানকার গ্রামগঞ্জে সামন্ত ম্যানর-প্রভুদের ক্ষমতা কমে দুর্বল হতে থাকে। নগর ও বন্দরগুলিতে উদীয়মান ব্যাবসায়িক গােষ্ঠী ভবিষ্যতের মর্যাদাসম্পন্ন গােষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।


ইউরােগে সামন্ততন্ত্রের গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি উল্লেখ করাে। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল?


ইউরােপে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় বা পতনের কারণগুলি কী ছিল?


প্রাচীন ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্কটি কী?


সামন্ততন্ত্র' বলতে কী বােঝ? ভারতের সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।


গুপ্তযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্তপ্রথার উত্থানের পটভূমি আলােচনা করাে।


ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্বের সহায়ক উপাদানগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করাে। গুপ্তযুগে অগ্রহার ব্যবস্থা সামন্ততন্ত্রের বিকাশে কতখানি সহায়তা করেছিল?


সুলতানি আমলে ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)