প্রাচীন মিশরীয় জনসমাজের শ্রেণিবিন্যাস করাে। এই সমাজে প্রচলিত ক্রীতদাস প্রথা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

প্রাচীন মিশরীয় সমাজের শ্রেণিবিন্যাস

মিশর হল সুপ্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি। রাজতন্ত্রের যুগে প্রাচীন মিশরের সমাজ সমাজ প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। এগুলি হল一


[1] অভিজাত শ্রেণি: মিশরের সম্রাট, রাজপরিবার, ধনী ভূস্বামী, পুরােহিত, উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা (ভিজিয়ার) ও অন্যান্য উচ্চবিত্তদের নিয়ে মিশরের সমাজে অভিজাত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। সমাজে তারা সর্বাধিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও বিশেষ সুযােগসুবিধা ভােগ করত।


[2] মধ্যবিত্ত শ্রেণি: ব্যবসায়ী, নির্মাতা, শিল্পী, কারিগর ও শিক্ষিতদের নিয়ে মিশরের মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। এই শ্রেণি মােটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবন কাটাতাে।


[3] নিম্নশ্রেণি: মিশরীয় সমাজব্যবস্থায় ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিক, অন্যান্য দরিদ্র শ্রেণি ও বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাসদের নিয়ে সমাজের নিম্নশ্রেণি গড়ে উঠেছিল।


মিশরের ক্রীতদাস প্রথা


প্রাচীন রােমান সভ্যতার মতাে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায়ও ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল। তবে মিশরের ক্রীতদাসদের বাস্তব অবস্থা প্রাচীন গ্রিস বা রােমের ক্রীতদাসদের থেকে আলাদা ছিল।


[1] প্রাচীন মিশরে 'ক্রীতদাস' শব্দের অর্থ: প্রাচীন মিশরের 'ক্রীতদাস' ছিলেন তারা, যারা কোনাে ব্যক্তি বা পরিবারের সম্পত্তি হিসেবে তার মালিকের গােলামি বা দাসত্ব করত। এই অর্থে মিশরের ক্রীতদাসরা তাদের মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। তবে মিশরে তারা কিছু কিছু নাগরিক অধিকারও ভােগ করত।


[2] ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতা: প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতা ছিল। মিশরীয় ফ্যারাও তৃতীয় থুটমােস একটি প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, ক্যানান অভিযান থেকে ফেরার সময় তিনি প্রায় ৯০ হাজার যুদ্ধবন্দিকে এনে ক্রীতদাসে পরিণত করেন। এ থেকেই সেদেশে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতার আভাস পাওয়া যায়।


[3] ক্রীতদাস সংগ্রহ: মিশরে বিভিন্ন উপায়ে ক্রীতদাস সংগ্রহ হত一 [i] শত্রু পক্ষের সৈন্যদের পরাজিত ও বন্দি করা। [ii] অভাবের তাড়নায় দরিদ্র পিতামাতাদের নিজেদের বা তাদের সন্তানদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া। [iii] মহাজন কর্তৃক ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তিকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া। [iv] কোনাে ক্রীতদাসের সন্তানসন্ততিও জন্মসূত্রে পিতামাতার প্রভুর ক্রীতদাসে পরিণত হত। [v] কেউ কেউ আবার দেবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে স্বেচ্ছায় ক্রীতদাসত্ব বরণ করত।


[4] ক্রীতদাস ব্যাবসা: মিশরে ক্রীতদাস ব্যাবসার প্রচলন হয়েছিল। দাস ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সেদেশে দাস বাজার গড়ে উঠেছিল। ক্রীতদাস বাজারে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি মূল্যে বিক্রি হত।


উপসংহার: ক্রীতদাস প্রথা প্রাচীন মিশরের সমাজ ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছিল ঠিকই, তবে পরবর্তীকালের রােমান সাম্রাজ্যে ক্রীতদাস প্রথার যে ব্যাপকতা দেখা গিয়েছিল ততটা ব্যাপকতা মিশরে দেখা যায়নি।


প্রাচীন বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব সম্পর্কে কী জান? প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস প্রথার পরিচয় দাও।


প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস প্রথার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে এবং সেদেশে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতার পরিচয় দাও।


প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত? রােমে ক্রীতদাসদের জীবন কেমন ছিল?


রােমে ক্রীতদাস ক্রয়বিক্রয় বাজারের বর্ণনা দাও। ক্রীতদাস প্রথা কীভাবে প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যকে দুর্বল করেছিল?


রােমের ক্রীতদাসরা পালানাের চেষ্টা করত কেন? রােমের ক্রীতদাসরা কীভাবে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারত?


রােমে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি কী ছিল? প্রাচীন রােমান অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব উল্লেখ করাে।


রােমের ক্রীতদাস বিদ্রোহগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। বিদ্রোহের পটভূমিতে রােমান ক্রীতদাসরা কী কী অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছিল?