প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন যুগে প্রচলিত দাস (ক্রীতদাস) প্রথার পরিচয় দাও। মৌর্যযুগে ভারতে দাসপ্রথার কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।

প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাস প্রথা

মেগাস্থিনিস লিখেছেন যে, "ভারতে কোনাে ক্রীতদাস নেই, এখানে সবাই স্বাধীন।"কিন্তু অন্যান্য বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল।


[1] বৈদিক যুগ: বৈদিক যুগে ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। বৈদিক সাহিত্যে ভারতের আদিম উপজাতিদের 'দাস' বা দস্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর্যরা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে এই দাসদের কৃষিকাজে নিয়ােগ করত। এ ছাড়া বৈদিক যুগে [i] অনেকে জন্মসূত্রে দাসে পরিণত হত, [ii] কেউ কেউ ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যেত এবং [iii] কেউ কেউ স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করত।


[2] মৌর্যযুগ: মৌর্যযুগে দাসদের অধিকাংশই ছিল শূদ্র। দাসদের শ্রমের ওপরেই কৃষি উৎপাদন নির্ভর করত। এযুগে বহু ক্ষেত্রে দাসদের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কৌটিল্য দাসপ্রথাকে ম্নেচ্ছপ্রথা বলে অভিহিত করেছেন। তবে এযুগে দাসরা কিছু কিছু আইনি অধিকারও ভােগ করতে পারত।


[3] মৌর্য-পরবর্তী যুগ: মৌর্য-পরবর্তী যুগে ভারতে দাসদের সংখ্যা এবং তাদের প্রতি কঠোরতা বৃদ্ধি পায়। এই সময় মনুসংহিতায় দাস ব্যবস্থার প্রশংসা করা হয়েছে। প্রভুর ঔরসজাত দাসীর সন্তানও এযুগে দাস বলেই গণ্য হত।


[4] গুপ্তযুগ: গুপ্তযুগেও দাসপ্রথা অব্যাহত ছিল। তবে আগের মতােই ব্রাহ্মণদের দাসপ্রথার বাইরে রাখা হয়|কাত্যায়ণস্মৃতিতে বলা হয় যে, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা সন্ন্যাস ধর্ম পালন না করলে তাদের দাসত্ব বরণের শাস্তি ভােগ করতে হবে। গুপ্ত-পরবর্তী যুগেও ভারতীয় সমাজে এই দাসপ্রথার প্রচলন অব্যাহত ছিল।


[5] পাল ও সেনযুগ: পাল এবং সেনযুগেও ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। 'আর্যমঞ্জুশ্ৰীমূলকল্প'-এ পালবংশকে 'দাসজীবিণঃ' বা দাসবংশীয় শূদ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেনযুগেও শূদ্রদের জীবন দাসদের থেকে পৃথক ছিল না।


মৌর্যযুগে দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্য


মৌর্যযুগে ভারতীয় দাসপ্রথার কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল-


[1] উৎস: মৌর্যযুগে দাসত্বের প্রধান উৎসগুলি ছিল যুদ্ধবন্দিত্ব, দারিদ্র্য, আত্ম বিক্রয়, জন্মসূত্র, অপরাধের শাস্তি।


[2] গুরুত্বহীনতা: মৌর্যযুগের সমাজ ও অর্থনীতিতে দাসদের সংখ্যা ও গুরুত্ব উভয়ই ছিল সামান্য। তখন উৎপাদন-কার্য ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি দাসদের ওপর নয়, স্বাধীন শ্রমিক, কৃষক ও কারিগরদের ওপরই নির্ভরশীল ছিল।


[3] প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি: মৌর্যযুগে দাসপ্রথা একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল এবং সেসময় মালিকের সঙ্গে দাসদের আইনগত সম্পর্ক সুনির্দিষ্ট ছিল।


[4] দাসদের শ্রেণিবিভাজন: এযুগে ভারতে দুই শ্রেণির দাসের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়—[i] শাস্তি ভােগকারী দাস এবং [ii] গৃহকার্যে নিযুক্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা দাস।


[5] দাসদের অধিকার: মৌর্যযুগে দাস উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির মালিক হতে পারত এবং সম্পত্তি ভােগদখল করতে পারত। তারা অর্থ প্রদানের বিনিময়ে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন জীবনে ফিরে আসতে পারত।


[6] পেশা: এযুগে অধিকাংশ দাস ধনী পরিবারগুলির গৃহকার্যে নিযুক্ত হত। তা ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে ও খনিতে শ্রমিক হিসেবেও তারা কাজ করত।


উপসংহার: প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন যুগেই দাসপ্রথা কোনাে না কোনােভাবে অস্তিত্বশীল ছিল। কিন্তু তাদের অবস্থা প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসদের মতাে এতটা করুগণ ছিল না। মৌর্যযুগে ভারতে দাসপ্রথার অস্তিত্বটি ছিল অতি ক্ষীণ।


প্রাচীন মিশরীয় জনসমাজের শ্রেণিবিন্যাস করাে। এই সমাজে প্রচলিত ক্রীতদাস প্রথা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব সম্পর্কিত বিতর্কটি উল্লেখ করাে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় ক্রীতদাসদের জীবন কতটা দুর্বিষহ ছিল?


প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত? প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল?


প্রাচীন মিশরের কৃষক ও ক্রীতদাসের অবস্থার তুলনা করাে।


প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত? প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব উল্লেখ করাে।


রােমান ক্রীতদাসদের কোন্ কোন্ অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হত এবং জন্মসূত্রে কারা ক্রীতদাসে পরিণত হত? প্রাচীন রােমান ও প্রাচীন মিশরীয় ক্রীতদাস প্রথার মধ্যে কয়েকটি প্রধান পার্থক্য উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাস (বা দাস) প্রথার অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্কটি উল্লেখ করাে। ঐতিহাসিকদের মতানুযায়ী প্রাচীন ভারতীয় দাসরা কী কী কাজ বা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল?