ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করাে।

সাম্প্রতিককালে আমাদের কাছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের এই ধারণাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রূপে চিহ্নিত হয়। বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভােগ্যপণ্য উৎপাদন ও তার চাহিদা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এর ফলে উপভােগ্য সামগ্রী যেমন বাজারে আসছে তেমনই ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহকৃত দ্রব্য এবং পরিসেবার গুণগত মান, পরিমাণ, পরিশুদ্ধতা এবং সঠিক মূল্য যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, ক্রেতা ও উপভােক্তাদের (কনজিউমার) স্বার্থ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে একাধিক আইন প্রণয়ন করেছে। এই ক্রেতা যদি হাটবাজার, দোকান বা কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনাে জিনিস কিনে প্রতারিত হয় তাহলে সেই উপভােক্তা আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাহায্য পেতে পারে, যাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত। এই ক্রেতা আদালতের একটি ভিন্ন নাম হল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।


ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

(1) উপভােক্তার স্বার্থ সুরক্ষিত করা: ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হল উপভােক্তার স্বার্থকে সুরক্ষিত করা। ক্রেতাগণ বিক্রেতার নিকট থেকে কোনাে জিনিস বা পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হয়ে কোনাে অভিযোগ দায়ের করলে সত্বর তার প্রতিবিধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতা সুরক্ষা আইন (ত্রিস্তরীয় আইন) যথা কেন্দ্র, রাজ্য এবং জেলা স্তরের ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১ কোটি টাকার বেশি হলে কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন, ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা হলে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন এবং ক্রেতার অভিযােগের সঙ্গে ২০ লক্ষ টাকার কম মূল্য জড়িত থাকলে তার প্রতিকার কল্পে জেলা ফোরাম বিচার করে থাকে।


(2) এক্তিয়ার বিচারের ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আদালতগুলিতে উপভােক্তারা যে অভিযােগগুলি দায়ের করে, সেগুলির পুক্ষানু পুক্ষ বিচার করে সেই বিষয়ে সুনিশ্চিত হয় যে, সংশ্লিষ্ট অভিযােগের প্রতিবিধান বা সমাধানসূত্র দেওয়া তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না। যদি সেই অভিযােগটি এক্তিয়ারভুক্ত হয় তবেই এরূপ আদালত সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।


(3) রায় বা আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের (২০০২ খ্রিস্টাব্দে সংশােধিত) নির্দেশ অনুসারে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তার রায় বা নির্দেশ, আদেশ বলবৎ করে থাকে। সংশােধিত আইনে উল্লেখ করা আছে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে নির্দেশ অমান্যকারীকে জেল ও জরিমানা দুই-ই বলবৎ করার নির্দেশ দিতে পারে (ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ২৫ নং ও ২৭ নং ধারা অনুসারে)। এমনকি আদেশ অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক করতে পারে। প্রয়ােজনে ক্রেতা আদালত তার নিজ রায়ের পুনর্বিবেচনা করার অধিকার ভােগ করে।


(4) সাংবিধানিক দণ্ডবিধি প্রয়ােগের ক্ষমতা: ভারতীয় সাধারণ বিচারালয়ের বিচারব্যবস্থায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি ক্ষেত্রে আদালত যেসব দণ্ডবিধি প্রয়ােগের ক্ষমতা ভােগ করে, বার্তা সুরক্ষা আদালতও অনুরূপ দণ্ডবিধি প্রয়ােগ করে কোনাে সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে উপযুক্ত নথি এবং দলিল দস্তাবেজ-সহ ক্রেতা আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করতে পারে।


(5) অভিযােগ গ্রহণের পরিবর্তে ভৎসনার ক্ষমতা: জাতীয় কমিশন বা রাজ্য কমিশন অথবা জেলা ফোরাম অভিযােগকারীর অভিযােগ খতিয়ে দেখে যদি মনে করে অভিযােগ হয়রানিমূলক (Vexations) বা তুচ্ছ (Frivolous) তাহলে সেই অভিযােগ খারিজ করে দিতে পারে।


(6) প্রতিবিধানের উপযুক্ত আইন প্রণয়ন: বিব্রু তাদের অসৎ উদ্দেশ্য কিংবা অসৎ ব্যাবসা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ক্রেতা সুরক্ষা আইন পাস করে ক্রেতা আদালতকে বিশেষ শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। এমনকি পরবর্তীকালে ১৯৯৩ ও ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ক্রেতা সুরক্ষা আইনটি পুনরায় সংশােধন করে নতুন নতুন সমস্যা মােকাবিলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।


(7) উপভােত্তাদের সচেতন করা: ক্রেতারা কীভাবে অসৎ ব্যবসায়ীদের কবল থেকে মুক্ত থাকতে পারে, সে বিষয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সচেতনতা শিবির ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষদের সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তা ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তােলা হয়েছে।


(8) মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইন মােতাবেক রাজ্য কমিশন জেলা ফোরামের অধীন বিচারাধীন বা জাতীয় কমিশন, রাজ্য কমিশনের বিচারাধীন কোনাে মামলাকে নিজ এক্তিয়ারে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।


(9) মামলা রিভিয়ু করার ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ১৭নং ধারা অনুযায়ী নথিপত্র তলব করে কোনাে মামলা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় কমিশন রিভিয়ু বা পুনর্বিচার করার ক্ষমতা এই আদালত ভােগ করে থাকে। তা ছাড়া জাতীয় ক্রেতা আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিয়ে নােটিফিকেশন জারি করে নতুন আইন বা রেগুলেশন তৈরি করতে পারে।


(10) বিভিন্ন স্তরে অভিযােগ দায়ের করা: ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ক্রেতাদের নির্দেশ প্রদান করে যে, প্রতারিত ক্রেতারা জেলা ফোরাম, রাজ্য কমিশন, জাতীয় কমিশনে তাদের অভিযােগ জানাতে পারে। যেমন, কোনাে মামলাকে জাতীয় কমিশন এক রাজ্যের জেলা ক্রেতা আদালত থেকে অন্য রাজ্যের জেলা ক্রেতা আদালতে স্থানান্তরিত করতে পারে।