ভারতীয় পার্লামেন্টের কমিটি ব্যবস্থার পর্যালোচনা করাে।

ভারতীয় পার্লামেন্টের কমিটি ব্যবস্থা

ভূমিকা: বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ এই ভারতবর্ষ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় ভারতেও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য সরকারকে আত্মনিয়ােগ করতে হয়। এই কারণেই পার্লামেন্টের কাজের পরিধি ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। এই জটিলতার অবসান ঘটানাে সংসদের কোনাে সাধারণ সদস্যের দ্বারা সম্ভব নয় বলেই প্রকৃত জনগণের কল্যাণের স্বার্থে গঠিত সংসদীয় কমিটি ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে।


কমিটি ব্যবস্থা আধুনিক আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জটিলতার ফলে প্রত্যেক দেশেই আইন প্রণয়নের প্রয়ােজনীয়তা এবং আইনের বিষয়বস্তুগত জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব প্রতিটি বিল ধারাবাহিকভাবে আলােচনা এবং তার খুঁটিনাটি সকল বিষয় পর্যালােচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আইনসভার পক্ষে সম্ভব হয় না। আইনসভার হাতে বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে ওই কমিটি সমূহ বিলের বিভিন্ন দিক আলােচনার পর প্রতিবেদন পেশ করতে পারে। এর ফলে আইনসভা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যে অধিকতর মনােনিবেশ করতে সক্ষম হয়।


কমিটি ব্যবস্থা কার্যকর করা হলে আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিলের জটিল বিষয় সম্পর্কে আলােচনা করা সম্ভব হয়। কমিটি ব্যবস্থা সংসদের নিপুণতা বৃদ্ধি এবং দ্রুততার সঙ্গে কার্য পরিচালনায় সাহায্য করে। ভারতের সংসদের কমিটিসমূহকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা― (A) স্থায়ী কমিটি (Standing Committee), (B) অস্থায়ী কমিটি (Adhoc Committee)। সংসদের স্থায়ী কমিটিসমূহের গঠন ও দায়িত্বের বিবরণ নিম্নে আলােচনা করা হল一

ভারতীয় পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটি

স্থায়ী কমিটির সংজ্ঞা: যে কমিটিসমূহ স্থায়ীভাবে তার কার্য পরিচালনা করে থাকে, তাকে স্থায়ী কমিটি বলা হয়। ভারতীয় পার্লামেন্ট বা সংসদের দুটি কক্ষে যথা রাজ্যসভা ও লোকসভায় নানাবিধ স্থায়ী কমিটি লক্ষ্য করা যায়। সংসদে মােট ১৪টি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। যথা一

  • (1) আনুমানিক ব্যয় পরীক্ষা কমিটি,
  • (2) সরকারি গাণিতিক কমিটি,
  • (3) নিয়মাবলি সংক্রান্ত কমিটি,
  • (4) কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি,
  • (5) বেসরকারি বিল প্রস্তাব সংক্রান্ত কমিটি,
  • (6) আবেদন বিষয়ক কমিটি,
  • (7) অধস্তন আইন সম্পর্কিত কমিটি,
  • (8) বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত কমিটি,
  • (9) সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটি,
  • (10) লোকসভার সদস্যদের সভায় অনুপস্থিতি সম্পর্কিত কমিটি,
  • (11) সংসদের সদস্যদের বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত যুগ্ম কমিটি,
  • (12) কক্ষ সম্পর্কিত কমিটি,
  • (13) সরকারি উদ্যোগাধীন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি এবং
  • (14) গ্রন্থাগার সম্পর্কিত কমিটি।


(1) আনুমানিক ব্যয় পরীক্ষা কমিটি: আনুমানিক ব্যয় পরীক্ষা কমিটি ৩০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। লোকসভার সদস্যদের মধ্য থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে এই কমিটিতে তাদের দলের প্রতিনিধি পাঠানাের সুযােগ পায়। এই কমিটির মেয়াদ ১ বছর বলে ধার্য করা হয়েছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অর্থাৎ লোকসভার অধ্যক্ষ আনুমানিক ব্যয় পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি হিসেবে নিয়ােগ করে থাকেন।

  • কার্যাবলী: আনুমানিক ব্যয় হিসাব কমিটি সরকারের আনুমানিক বাজেট প্রস্তাবের বিস্তারিত বিচারবিশ্লেষণ করে এবং ব্যয়বরাদ্দের দাবির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।

(2) সরকারি গাণিতিক কমিটি: ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সরকারি আর্থিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে সরকারি গাণিতিক কমিটি। পার্লামেন্টের মােট ২২ জন সদস্য একক হস্তান্তরযােগ্য প্রতিনিধিত্বের নীতির ভিত্তিতে এই কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির ১৫ জন সদস্য লােকসভা থেকে এবং ৭ জন সদস্য রাজ্যসভা থেকে নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের কোনাে সদস্য সরকারি গাণিতিক কমিটির সদস্য হতে পারেন না। এই কমিটির সদস্যগণের কার্যাবলির মেয়াদ ১ বছর। লোকসভার স্পিকার বিরােধী দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে একজনকে কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করে থাকেন। তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সুযােগসুবিধা ভোগ করেন।

  • কার্যাবলি: সরকারি গাণিতিক কমিটির মূল কাজ হল সরকারের যাবতীয় ব্যয় এবং আর্থিক হিসাব পরীক্ষা করা। এই কমিটি বিনিয়োগ হিসাব, পার্লামেন্টের কাছে পেশ করা যাবতীয় হিসাব, নিয়ন্ত্রক ও মহা গণনা পরীক্ষক পেশ করা ব্যয় বরাদ্দের হিসাব পরীক্ষা করে। এই গাণিতিক কমিটির সদস্যরা সরকারি ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত যে-কোনাে প্রশ্ন তুলতে পারে।

(3) নিয়মাবলি সংক্রান্ত কমিটি: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে লোকসভা কার্যপদ্ধতি ও পরিচালনা সম্পর্কিত নিয়মকানুন পরিবর্তন বা নতুন নিয়মকানুন প্রণয়নের উদ্দেশ্যেই নিয়মাবলি সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির ১৫ জন সদস্য অধ্যক্ষ কর্তৃক মনােনীত হয়ে থাকেন। এই কমিটির সভাপতি হিসেবে স্পিকার তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

  • কার্যাবলি: এই কমিটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন- লোকসভার কার্য পরিচালনা সম্পর্কিত বিষয় পর্যালোচনা করা এবং প্রয়ােজনবােধে নিয়মাবলির সংশােধন বা সংযােজনের জন্য লোকসভার নিকট সুপারিশ জানানাে প্রভৃতি।

(4) কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি: ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এই কমিটি প্রথম গঠিত হয়। লোকসভা প্রত্যেক অধিবেশনের শুরুতেই এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মােট সদস্য সংখ্যা হল ১৫। এই কমিটির সভায় লোকসভার স্পিকার সভাপতিত্ব করে থাকেন।

  • কার্যাবলী: লোকসভার কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করাই হল কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির প্রধান কাজ। লোকসভায় বিল ও অন্যান্য বিষয় আলােচনার জন্য কতটা সময় ধার্য করা দরকার তা এই কমিটিই নির্ধারণ করে থাকে।

(5) বেসরকারি বিল প্রস্তাব সংক্রান্ত কমিটি: ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি বিল প্রস্তাব সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির ১৫ জন সদস্য লোকসভার অধ্যক্ষ কর্তৃক মনোনীত হন।

  • কার্যাবলী: এই কমিটি যে কাজগুলো করে থাকে সেগুলি হলㅡ (a) এই কমিটি বেসরকারি সদস্য দ্বারা উত্থাপিত বিল ও প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে। (b) কমিটি যদি উত্থাপিত বিল ও প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত করে তাহলে সেটি লোকসভার কার্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (c) বেসরকারি কোনাে বিলে যদি সংশােধন করার প্রয়ােজন দেখা দেয়। তাহলে কমিটি সংশ্লিষ্ট বিলটিকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে।


(6) আবেদন বিষয়ক কমিটি: ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে লােকসভা দ্বারা স্বীকৃত হয়ে এই আবেদন বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। লোকসভার অধ্যক্ষ কর্তৃক মনােনীত ১৫ জন সদস্যকে নিয়ে এই আবেদন বিষয়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটি নিজ সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করে।

  • কার্যাবলী: এই কমিটি যে কাজগুলো করে থাকে সেগুলি হলㅡ (a) স্পিকার মনােনীত বিল বা জনগণ কর্তৃক লোকসভার কাছে যেসকল আবেদন করা হয়, এই কমিটি সেগুলি বিচার বিবেচনা করে দেখে। (b) এই বিচার বিবেচনা গুলির বিষয়ের উপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লোকসভার কাছে তা পেশ করে। (c) লোকসভা তখন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের আবেদন সম্পর্কে বিচার বিবেচনা করে থাকে।

(7) অধস্তন আইন সম্পর্কিত কমিটি: লোকসভার স্পিকার মনোনীত ১৫ জন সদস্য নিয়ে ১ বছর কার্যকালের মেয়াদের পরিপ্রেক্ষিতে এই কমিটির সদস্যগণ নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বিরােধীদলের কোনাে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি স্পিকার কর্তৃক সভাপতি হিসেবে এই কমিটিতে নিযুক্ত হন।

  • কার্যাবলী: এই কমিটি যে কাজগুলি সম্পাদন করে সেগুলি হলㅡ (a) শাসন বিভাগ কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন (Delegated Legislation) বা অধস্তন আইনগুলি (Subordinate Legislation) যথাযথভাবে প্রয়ােগ করা হচ্ছে কি না তা দেখা অধস্তন আইন সংক্রান্ত কমিটির একটি প্রধান কাজ। (b) শাসন বিভাগ পার্লামেন্ট-প্রণীত ও প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কি না তা নজরে রাখা এবং সে বিষয়ে লােকসভার কাছে প্রতিবেদন পেশ করা।

(8) বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত কমিটি: বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত কমিটির ১৫ জন সদস্য লোকসভার অধ্যক্ষ কর্তৃক মনোনীত হয়ে থাকেন। স্পিকারই এই কমিটির সভাপতি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

  • কার্যাবলী: এই কমিটি যে কাজগুলো করে থাকে সেগুলি হলㅡ (a) কমিটির সদস্য ও সভার অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলি ভালাে করে বিচার বিবেচনা করা। যেমন— সদস্যদের স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদা প্রভৃতি। (b) কমিটি এই বিষয়গুলি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লােকসভায় পাঠায়, লােকসভা সেই প্রতিবেদনটির বিচারবিশ্লেষণ করে তারপর একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

(9) সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটি: ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এই কমিটি প্রথম গঠিত হয়। এই কমিটির ১৫ জন সদস্য ১ বছরের কার্যকালের মেয়াদে অধ্যক্ষ কর্তৃক মনােনীত হন। কোনাে মন্ত্রী এই কমিটির সদস্য হতে পারেন না।

  • কার্যাবলী : এই কমিটির কাজ গুলো হলㅡ (a) মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে লোকসভায় নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা কার্যকর করা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা। (b) এই পর্যালােচনার কাজ শেষ হলে কমিটি এটি প্রতিবেদনের আকারে লোকসভার কাছে পেশ করে থাকে।

(10) লোকসভার সদস্যদের সভায় অনুপস্থিতি সম্পর্কিত কমিটি: পূর্ব কমিটিগুলির মতাে এই কমিটির ১৫ জন সদস্য ১ বছরের কার্যকালের মেয়াদে লোকসভার স্পিকার কর্তৃক নিযুক্ত হন। এ ছাড়া এই কমিটির সভাপতিও স্পিকার কর্তৃক মনােনীত হন।

  • কার্যাবলী: এই কমিটির কাজ গুলো হলㅡ (a) সভায় কোনাে সাংসদের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতির কারণ পর্যালোচনা করে এবং তদন্ত করে লােকসভায় তার সুপারিশ পেশ করে। (b) লোকসভার কোনাে সদস্য সভার বৈঠকে অনুপস্থিত হলে সেই বিষয়ে কমিটিকে ছুটি চেয়ে একটা দরখাস্ত পাঠান। কমিটি সেই দরখাস্তের বিচারবিবেচনা করে থাকে।

(11) সংসদের সদস্যদের বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত যুগ্ম কমিটি: এই কমিটি মোট 20 জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে লোকসভার অধ্যক্ষ কর্তৃক মনােনীত ১৫ জন এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত ৫ জন সদস্য রয়েছে।

  • কার্যাবলি : এই কমিটির কাজগুলি হল(a) সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিবেদন ও হিসাব পরীক্ষা করে দেখা। (b) সংসদ সদস্যদের বেতন ও ভাতা বিচারবিবেচনা করে দেখে তার একটা সুপারিশ তৈরি করা।

(12) কক্ষ সম্পর্কিত কমিটি: অধ্যক্ষ কর্তৃক মনােনীত ১২ জন সদস্য নিয়ে এই কক্ষ সম্পর্কিত কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ১ বছর।

  • কার্যাবলী: এই কমিটির একটি প্রধান কাজ হল - লোকসভা সদস্যদের বাসস্থান ও সুযােগসুবিধার বিচারবিবেচনা করা।

(13) সরকারি উদ্যোগাধীন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি: ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এই কমিটি লোকসভা থেকে ১০ জন এবং রাজ্যসভা থেকে ৫ জন মােট ১৫ জন সদস্য নিয়ে প্রথম গঠিত হয়। সদস্যদের বয়সের উপর ভিত্তি করে মােট সদস্যের এক-পঞ্চমাংশ সদস্য এক বছর অন্তর অবসর গ্রহণ করেন।

  • কার্যাবলি: এই কমিটির কাজগুলি হলㅡ (a) সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিবেদন ও হিসাব পরীক্ষা করে দেখা। (b) সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক ও মহা গণনা পরীক্ষক কোনাে প্রতিবেদন থাকলে তা পরীক্ষা করে দেখা। (c) উদ্যোগসমূহের কার্যাবলি সঠিক বাণিজ্যিক নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা।

(14) গ্রন্থাগার সম্পর্কিত কমিটি: গ্রন্থাগার সম্পর্কিত কমিটি মােট ৯ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে স্পিকার কর্তৃক মনােনীত ৫ জন এবং রাজ্যসভার সভাপতি কর্তৃক মনােনীত ৪ জন সদস্য রয়েছে। লোকসভার ডেপুটি স্পিকার এই কমিটির সভাপতি হিসেবে কাজ করেন।

  • কার্যাবলি: এই কমিটির কাজ হল গ্রন্থাগারের সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যাপারে একটি সুপারিশ তৈরি করা।

ভারতীয় পার্লামেন্টের অস্থায়ী কমিটি

সংসদের বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের জন্য অস্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। নির্দিষ্ট কাজ শেষ হয়ে গেলেই অস্থায়ী কমিটি ভেঙে যেতে পারে। লোকসভায় দুই ধরনের অস্থায়ী কমিটি লক্ষ করা যায়, যথাㅡ (1) বিল সম্পর্কিত সিলেক্ট কমিটি এবং (2) অনুসন্ধান কমিটি।


(1) বিল সম্পর্কিত সিলেক্ট কমিটি: লোকসভায় কোনাে বিল সিলেক্ট কমিটিতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেই এই কমিটি গঠিত হয়। স্পিকার কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি হিসেবে মনােনীত করতে পারেন।

  • কার্যাবলি: সিলেক্ট কমিটি বিলটির বিভিন্ন ধারা ও উপধারা পরীক্ষা করে লােকসভায় প্রতিবেদন পেশ করে। এইভাবে সিলেক্ট কমিটির কার্যকাল শেষ হয়।

(2) অনুসন্ধান কমিটি: এই কমিটির মূল উদ্দেশ্যই হলো কোনাে বিশেষ বিষয়ের অনুসন্ধান করা।

  • কার্যাবলি: অনুসন্ধান কমিটির একটি কাজ হল বিশেষ কোনো ব্যাপারে অনুসন্ধানের কাজ শেষ করার পর তা নিয়ে লোকসভার কাছে প্রয়ােজনীয় সুপারিশ পেশ করা।

এ ছাড়া রাজ্যসভার কমিটি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কমিটি হল— কার্য পরিচালনা সম্পর্কিত কমিটি, আবেদন সম্পর্কিত কমিটি, বিশেষাধিকার সম্পর্কিত কমিটি, নিয়মাবলি সম্পর্কিত কমিটি।


উপসংহার: ভারতীয় পার্লামেন্টের কমিটি ব্যবস্থার মাধ্যমে সংসদের অমূল্য সময় বাঁচানাে যায়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিটি ব্যবস্থার উপযােগিতা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। যেমনㅡবিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে বিলের খসড়া প্রস্তাবগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করা, আইনসভার মূল্যবান সময়ের সদ্ব্যবহার, সুচিন্তিত অভিমত প্রদান, সংসদীয় সরকারের দায়িত্বশীলতা বা দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি।