ভারতের সংসদের গঠন ও কার্যাবলি | ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

ভারতীয় পার্লামেন্ট

ভূমিকা : ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা বা পার্লামেন্ট সংসদ নামে পরিচিত। ভারতের পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। ভারতের সংবিধানের ৭৯ নং ধারায় পার্লামেন্টের গঠন বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। ৭৯ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি এবং পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ (যথা উচ্চকক্ষ মানে রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ মানে লােকসভা) নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠিত হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এবং আমেরিকার আইনসভা অর্থাৎ কংগ্রেসের ধারাকে যৌথভাবে অনুসরণ করে ভারতীয় পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছে। বলা হয় যে, ব্রিটেনের রাজা বা রানির মতো ভারতের রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং বলা যায়, ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার তিনটি অংশ রয়েছে। যথা— (a) রাষ্ট্রপতি (President), (b) রাজ্যসভা (Council of States), (c) লোকসভা (House of the People)।


রাজ্যসভা গঠন


পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হল রাজ্যসভা। ভারতীয় সংবিধানের ৮০ নং ধারা অনুসারে অনধিক ২৫০ জন সদস্যকে নিয়ে রাজ্যসভা গঠিত হয়। এর মধ্য থেকে ১২ জন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনােনীত করেন। রাষ্ট্রপতি এই সদস্যদের সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবা, চারুকলা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মনোনীত করে থাকেন। অবশিষ্ট ২৩৮ জন সদস্য অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বর্তমানে রাজ্যসভার মােট সদস্য সংখ্যা ২৪৫ জন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একক হস্তান্তরযােগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়মানুযায়ী রাজ্যসভার প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। অপরদিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি একটি বিশেষ নির্বাচনী সংস্থা (Electoral College) গঠনের মাধ্যমে রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচিত করেন। রাজ্যসভার সদস্য ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। রাজ্যসভা স্থায়ী কক্ষ বলেই প্রতি দু-বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন। সেই জায়গায় একই সংখ্যক নতুন সদস্য নির্বাচিত হন। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে কার্য সম্পাদন করে থাকেন।


লোকসভা গঠন


ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হল লোকসভা। এই কক্ষের প্রতিনিধিগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দ্বারা নির্বাচিত হয় বলেই এই কক্ষকে জনপ্রতিনিধি কক্ষ বলা হয়। লােকসভা সর্বাধিক ৫৫২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হতে পারে। লােকসভার সদস্যদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। যথা - (1) অঙ্গরাজ্যসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ (৫৩০ জন), (2) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ (২০ জন), (3) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনােনীত ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্যবৃন্দ (২ জন)। বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৫ জন। লোকসভার সদস্যদের সাধারণ কার্যকালের মেয়াদ হল ৫ বছর। তবে এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই রাষ্ট্রপতি লােকসভা ভেঙে দিতে পারেন। আবার জরুরি অবস্থার সময় তিনি লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ প্রতিবার ১ বছর করে বৃদ্ধি করতে পারেন। লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষ এবং একজনকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচন করে থাকেন।


ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি


ভারতীয় সংবিধানের Part-V অংশে পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হয়েছে। নিম্নে ভারতীয় পার্লামেন্টের বা কেন্দ্রীয় আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করা হল一


(১) আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা: পার্লামেন্ট হল একটি আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, যদিও আইন প্রণয়ন করা ছাড়াও পার্লামেন্টকে আরও বহু কাজ করতে হয়। পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতাকে সংবিধানের সপ্তম তফসিল তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- (a) কেন্দ্রীয় তালিকা, (b) রাজ্য তালিকা এবং (c) যুগ্ম তালিকা।

  • কেন্দ্রীয় তালিকা: বর্তমানে কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত ১০০টি বিষয়ে পার্লামেন্ট এককভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। যেমন প্রতিরক্ষা, মুদ্রা, যুদ্ধ ঘােষণা, আন্তর্জাতিক সন্ধি-চুক্তি স্থাপন ইত্যাদি।


  • রাজ্য তালিকা: দুই বা ততােধিক রাজ্যের অনুরােধে অথবা রাজ্যসভায় গৃহীত কোনাে প্রস্তাবের ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট সাধারণ সময়ে রাজ্য তালিকাভুক্ত কোনাে বিষয়ের উপরও আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম। তা ছাড়া রাজ্যসভায় উপস্থিত এবং ভােটদানকারী দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে গৃহীত প্রস্তাবকে অনুসরণ করে জাতীয় স্বার্থের খাতিরে পার্লামেন্ট রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। বর্তমানে ৬১টি বিষয়ে রাজ্যগুলি এককভাবে আইন প্রণয়ন করে থাকে। যেমন জনশৃঙ্খলা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি এবং স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে। এমনকি দেশে জরুরি অবস্থা ঘােষিত হওয়ার ফলে পার্লামেন্ট রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়ের উপরও আইন প্রণয়ন করে থাকে।


  • যুগ্ম তালিকা: বর্তমানে যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত ৫২টি বিষয়ে কেন্দ্র এবং অঙ্গরাজ্যগুলি পৃথক পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। যেমন বিবাহ, শিক্ষা, সামাজিক বিমা ইত্যাদি।

মনে রাখা দরকার রাজ্যসভা ও লোকসভা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। যেমন নতুন রাজ্য পুনর্গঠন, সীমানা হ্রাস, সংযুক্তিকরণ, নাম পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়গুলি পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে করে থাকে। অবশ্য কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের বিষয়ে রাজ্যসভার থেকে লোকসভা অধিক ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।


(২) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা: ভারতীয় সংবিধানের ২৬৫-২৬৬ নং ধারায় কেন্দ্রীয় সরকারের আয় ব্যয় সংক্রান্ত ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী সরকার পার্লামেন্টের সম্মতি ব্যতিরেকে কোনাে কর ধার্য, কর সংগ্রহ বা ব্যয় নির্বাহ করতে পারে না। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সরকারের পরবর্তী আর্থিক বছরের সম্ভাব্য আয় ব্যয়ের উপর পার্লামেন্টে যে বাজেট পেশ করেন, তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে সাংসদরা সরকারের বাজেট অনুমোদন করে থাকেন। এ ছাড়া সরকারের আয় ব্যয় হিসাব পরীক্ষার জন্য লোকসভার দুটি কমিটি রয়েছে, যথা সরকারি গাণিতিক কমিটি (Public Accounts Committee) এবং আনুমানিক ব্যয় হিসাব কমিটি (Estimates Committee)I


এ ব্যাপারে পার্লামেন্টকে সাহায্য করেন ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক (Comptroller & Auditor General of India)। বাস্তবে লক্ষ করা যায়, অর্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে লােকসভার একক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন অর্থ বিল এবং সরকারের আয় ব্যয় সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলি বা বাজেট কেবলমাত্র লোকসভায় পেশ করা হয়। অর্থ সংক্রান্ত কোনাে বিল রাজ্যসভায় উত্থাপন করা যায় না। লোকসভায় গৃহীত কোনাে অর্থ বিল রাজ্যসভায় প্রেরিত হলে ১৪ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিলটি লােকসভায় ফেরত না এলে উভয় কক্ষে বিলটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। অন্যদিকে লোকসভার অনুমতি ছাড়া সরকার কোনাে অর্থ খরচ করতে পারে না। নতুন কর আরােপ, পুরাতন করের পুনর্বিন্যাস বা বিলােপসাধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট বাস্তবে লোকসভার অনুমােদন ছাড়া কোনাে কাজ করতে পারে না।


(৩) শাসন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ: ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পার্লামেন্ট। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হল সরকার গঠনের অধিকারী। তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের অংশ হিসেবে পার্লামেন্টের যে-কোনাে কক্ষের মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী নিযুক্ত করে থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশমতাে নিযুক্ত করেন মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রী-সহ এই মন্ত্রিসভার কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন বিভাগ নামে অভিহিত করা হয়।


এই মন্ত্রীসভা তার সমস্ত কাজের জন্য পার্লামেন্টের নিকট যৌথভাবে দায়ী থাকে। মন্ত্রীসভার এই দায়িত্বশীলতা যৌথ দায়িত্বশীলতা (Collective responsibility) নামে পরিচিত। পার্লামেন্ট বিভিন্ন উপায়ে মন্ত্রীদের এই দায়িত্বশীলতাকে কার্যকর করে থাকে। যেমন খবরাখবরের জন্য মন্ত্রীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, মুলতুবি প্রস্তাব, নিন্দাসূচক প্রস্তাব, অনাস্থা প্রস্তাব ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারি এবং বিরােধী দলের সদস্যরা মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। পার্লামেন্ট মন্ত্রীসভার কোনাে কাজকে সমর্থন না করে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে। অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে মন্ত্রীপরিষদকে পদত্যাগ করতে হয়। তবে মন্ত্রীসভার এই দায়িত্বশীলতা কেবলমাত্র লোকসভার নিকট। এ ব্যাপারে রাজ্যসভার কোনাে ভূমিকা নেই।


(৪) নির্বাচন ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত ক্ষমতা: পার্লামেন্টের নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতাও কিছু রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য যে নির্বাচনের সংস্থা (Electoral College) গঠিত হয়—রাজ্য আইনসভা গুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট হল তার প্রধান এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্লামেন্টের দুই কক্ষ মিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিতেই উপরাষ্ট্রপতি কে নির্বাচন করে থাকে। এ ছাড়া লােকসভার স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার লোকসভা মধ্য থেকেই লোকসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টের পদচ্যুতি সংক্রান্ত ক্ষমতা রয়েছে। উপরাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বা পদচ্যুতি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের সিদ্ধান্তের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এ ছাড়া লোকসভার স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ, কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার প্রভৃতি পদাধিকারী ব্যক্তিদের অপসারণ বা পদচ্যুতির সিদ্ধান্ত পার্লামেন্ট গ্রহণ করতে পারে।


(৫) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা: পার্লামেন্ট আইনসভার অবমাননা অথবা অধিকার ভঙ্গের অভিযােগে পার্লামেন্টের সদস্য বা সদস্য নন এমন যে-কোনাে ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। পার্লামেন্ট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্ট স্থাপন বা কোনাে অধস্তন আদালতে হাইকোর্টের মর্যাদায় উন্নীত করতে পারে।


(৬) সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ক্ষমতা: সংবিধান-সংশােধনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সংবিধানের ৩৬৮ নং ধারা অনুসারে কতিপয় ক্ষেত্রে সংবিধান-সংশোধনের জন্য অঙ্গরাজ্যের আইন সভার অনুমতি প্রয়ােজন হয়। যেমন-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট সংক্রান্ত বিষয়, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন, সংসদে অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব, সংবিধান সংশােধন পদ্ধতির পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে পার্লামেন্ট সংবিধান সংশােধন করতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে সংবিধান সংশােধিত হতে পারে। সংবিধানের ৪২ তম সংশােধনের পর, পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে।


(৭) জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা: পার্লামেন্টের অনুমােদনসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি তিন ধরনের জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে। যেমন— জাতীয় জরুরি অবস্থা (৩৫২ নং ধারা), রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা রাজ্যগুলিতে সাংবিধানিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা (৩৫৬ নং ধারা) এবং আর্থিক জরুরি অবস্থা (৩৬০ নং ধারা) ঘােষণা করতে পারেন। এই তিন ধরনের জরুরি অবস্থার ঘােষণা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষে অনুমােদিত হয়ে থাকে। যদি তা না হয় তাহলে ঘােষণাটি বাতিল বলে গণ্য করা হয়। এই বিষয়ে লােকসভা ও রাজ্যসভার ক্ষমতা ভােগ করে থাকে।


(৮) জনমত গঠন ও তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত ক্ষমতা: পার্লামেন্ট হল সমগ্র দেশের ভােটারদের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত হওয়ার একটি রাজনৈতিক মঞ্। এখানে সরকারের বিভিন্ন বিল, প্রস্তাব এবং কাজকর্মের উপর যেসকল আলােচনা, প্রশ্ন-উত্তর এবং তর্কবিতর্ক চলে তার মধ্য দিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশিত হয়। এই সমস্ত তথ্য জনগণের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, সুস্থ জনমত গঠনে এই সকল তথ্যের গুরুত্ব কোনাে অংশে কম নয়। বর্তমানে দূরদর্শনের মাধ্যমে সংসদের যাবতীয় খবরাখবর সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে এবং সংবাদপত্র ও খবরের চ্যানেলের মাধ্যমে জনগণ তাদের নিজস্ব মতামত গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে।


(৯) অন্যান্য ক্ষমতা: সমস্ত কাজ ছাড়াও পার্লামেন্টের আরও অন্যান্য অনেক কাজ রয়েছে। পার্লামেন্ট আইনের মাধ্যমে সংবিধানের ২ ও ৩ নং ধারানুযায়ী কোনাে নতুন রাজ্য সৃষ্টি করতে পারে এবং সৃষ্ট রাজ্যটিকে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

  • পার্লামেন্ট আইন করে কোনাে রাজ্যের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে।

  • কোন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে পারে।

  • রাজ্য বিধানসভার প্রস্তাব মতে রাজ্য আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষ সৃষ্টি অথবা অবলুপ্ত করতে পারে।

এ ধরনের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের রয়েছে।


মূল্যায়ন: ভারতীয় পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি যে-সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি করে থাকে তা বিচার করে পার্লামেন্টকে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী রূপে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তত্ত্বগতভাবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের থাকলেও কার্যক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটই আজ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রিটেনের মতাে ভারতবর্ষে আজ ক্যাবিনেট একনায়কত্বের (Cabinet Dictatorship) উদ্ভব ঘটেছে। আর সেই ক্যাবিনেট একনায়কত্বের কাছে ভারতীয় পার্লামেন্ট হারিয়ে ফেলছে তার সার্বভৌম চরিত্র। তবে উপরােক্ত আলােচনার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, শাসন বিভাগের ইশারাতেই পার্লামেন্টের কাজকর্ম বাস্তবে পরিচালিত হয়ে থাকে।


রাজ্য জনকৃত্যক কমিশনের কাজ | রাজ্য জনপালন কৃত্যকের কার্যাবলি | রাজ্য জনকৃত্যক কমিশনের সমালােচনা


রাজ্য সচিবালয়ের গঠন ও কার্যাবলি | রাজ্য সচিবালয়ের প্রধান কাজগুলি ব্যাখ্যা করাে।


পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনে মুখ্য সচিবের ভূমিকা | রাজ্য মুখ্যসচিবের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা