প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা সম্ভব এবং এর প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের উপায়

প্রক্ষোভ হল একপ্রকার জটিল অনুভূতি যা দৈহিক ও মানসিক উভয় প্রকার হয়ে থাকে। মানসিক দিক থেকে প্রক্ষোভ চিন্তা ও আচরণের মধ্যে প্রকাশ পায়। যেসব কাজ শিক্ষার্থীদের বিকাশ ঘটায়, সেসব কার্যাবলিকে প্রাক্ষোভিক বিকাশমূলক কার্যাবলি বলে। যেমন— নাচ, গান, কবিতা রচনা, সাহিত্য রচনা ইত্যাদি। এসব কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রুদ্ধ আবেগ বেরিয়ে এসে প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য বজায় রাখে। নিম্নে প্রাক্ষোভিক নিয়ন্ত্রণের কার্যাবলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল 一

(১) আত্মপ্রকাশমূলক কার্যাবলি : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আত্মপ্রকাশমূলক কার্যক্রম যেমন— অভিনয়, বিতর্কসভা, সাহিত্যসভা ইত্যাদি প্রক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(২) রসবােধমূলক কার্যাবলি : বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি যেমন— আবৃত্তি, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, কৌতুক, বক্তৃতা এগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে রসবােধের সঞ্চার করে।

(৩) অবাঞ্ছিত প্ৰক্ষোভ বর্জন : অল্প বয়সে যাতে শিক্ষার্থীর অনুবর্তনের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত প্ৰক্ষোভ সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

(৪) সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশদান : শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য তাকে সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশদান করতে হবে।

(৫) অবসর যাপনমূলক কার্যাবলি : অবসর সময় শিক্ষার্থীদের সঠিক কার্যাবলি যেমন—শব্দকোশ তৈরি, বিজ্ঞান ও সাহিত্য আলােচনা ইত্যাদি প্রক্ষোভমূলক আচরণের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটায়।

(৬) সৃজনমূলক কার্যাবলি : কবিতা লেখা, গান করা, গল্প বলা, বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি, কোলাজ বানানাে, আঁকা ইত্যাদি বিভিন্ন সৃজনাত্মক কার্যাবলি প্রাক্ষোভিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

(৭) পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ : শিক্ষার্থীর মধ্যে যাতে সুস্থভাবে প্রক্ষোভের সৃষ্টি হয় তার জন্য শিক্ষার্থীর পরিবেশকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

(৮) সঠিক প্রক্ষোভ সৃষ্টিতে সহযােগিতা : অনুকূল প্রক্ষোভের ধারা শিক্ষার্থীর সুষ্ঠু বিকাশে যেমন সহযােগিতা করবে, তেমনি প্রতিকূল প্ৰক্ষোভগুলিকে অনুকূল প্রক্ষোভের দ্বারা নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা করতে হবে।

এইসব কার্যাবলি শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভের নিয়ন্ত্রণ ঘটিয়ে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে। তাই আধুনিক পাঠক্রমে প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা

শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশে শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের একটি অঙ্গ হল প্রাক্ষোভিক বিকাশ। আনন্দ, দুঃখ, ঘৃণা, ভালােবাসা, ভয়, রাগ, হিংসা প্রভৃতি প্রক্ষোভগুলি মানবজীবনে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সুস্থ মন মানুষের জীবনকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তােলে। কিন্তু মানসিক অস্থিরতা মানুষের জীবনে হানিকর। শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বসমূহ নীচে বর্ণিত হল।

(১) শিশুর সুস্থ মানসিক সংগঠনের জন্য : শিশুর সুষ্ঠু মানসিক সংগঠনের জন্য প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়ােজন। প্রক্ষোভ যদি অবাঞ্ছিতভাবে বিকাশলাভ করে তবে তার মানসিক সংগঠন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

(২) শিশুর সুষ্ঠু ও সুষম আচরণধারা গঠনের জন্য : শিশুর প্রতিটি আচরণের সঙ্গে তার প্রক্ষোভ জড়িত। তাই শিশুর সুষ্ঠু ও সুষম আচরণধারা গঠনের জন্য প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ প্রয়ােজন।

(৩) শিশুর পরিণত ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য : যদি অতিরিক্ত মাত্রায় প্রক্ষোভ বিকাশলাভ করে তবে ব্যক্তিত্ব অপরিণত হয়ে পড়ে। তাই শিশুর পরিণত ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের প্রয়ােজন।

(৪) শিশুর সুস্থ সামাজিকতা গঠনের জন্য : সুস্থ প্রক্ষোভ গঠনের দ্বারা শিশু সুস্থ আচরণ সম্পাদন করে। যাতে শিশুর আচরণ অসামাজিক বা ত্রুটিপূর্ণ না হয়, তার জন্য শিশুর প্রক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

উপরােক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রক্ষোভের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সম্ভব, যার দ্বারা শিক্ষার্থীদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন বিকশিত হবে এবং যা সামাজিক প্রগতির ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।